পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।—ফাইল চিত্র।
লাভজনক পদ নিয়ে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের জবাবে কি ‘সন্তুষ্ট’ নয় নির্বাচন কমিশন! তা না হলে কেন পুরমন্ত্রীকে সশরীরে উপস্থিতির কথা বলছে তারা! এমনকি, বিধিসম্মত হলফনামা-সহ লিখিত জবাবও পুরমন্ত্রীকে দিতে বলেছে কমিশন। এ নিয়ে অবশ্য কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি ফিরহাদের। তাঁকে ফোন এবং টেক্সট মেসেজ করা হয়। কিন্তু প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
কয়েক দিন আগে ফিরহাদকে নোটিস পাঠিয়েছে কমিশন। যার প্রতিলিপি রাজ্যপালের দফতর এবং রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিবকে পাঠিয়েছে তারা। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী ১৭ নভেম্বর বিকেল সাড়ে চারটের মধ্যে কমিশনের সামনে উপস্থিত হতে হবে ফিরহাদকে। তার আগে ১০ নভেম্বরের মধ্যে এই সংক্রান্ত নানা নথি-সহ বিধিসম্মত হলফনামার সঙ্গে লিখিত জবাব দিতে পারবেন তিনি। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে জবাব না এলে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে কমিশন।
গত ৮ মে কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে বসেন ফিরহাদ। তিনি কলকাতা বন্দর বিধানসভাকেন্দ্রের বিধায়ক। পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডে ‘চেয়ারম্যান’-এর লাভজনক পদে বসার জন্য কেন তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রাজ্যের কাছে গত ১ জুলাই চিঠি দিয়েছিল কমিশন। জবাবি চিঠিতে কমিশনকে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে ফিরহাদ কোনও ভাতা বা বেতন নেন না। যে গাড়িটি ব্যবহার করেন, তা মন্ত্রী বা বিধায়ক হিসেবে পাওয়া সুবিধার আওতাধীন। ফোনের বিল পর্যন্ত পুরসভার থেকে নেন না।
আরও পড়ুন: প্রেমিক মনে বসন্ত ডিসেম্বরেই
কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে বেতন বা ভাতা ফিরহাদ পান কি না, কবে তাঁর পদে বসার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়, পুর প্রশাসকের পদটি রাজ্য সরকারের অধীনে কি না, নিয়োগ কর্তা, নিয়োগ পত্র, নিয়োগের বিস্তারিত তথ্য, পুর-প্রশাসক হিসেবে কী কী সুবিধা বিধায়ক পান, কী ধরনের কাজ করতে হয় পুর-প্রশাসককে— জানতে চেয়েছিল কমিশন। লাভজনক পদ সংক্রান্ত আইনে কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান পদটি ছাড়ের তালিকায় রয়েছে কি না, তা-ও জানতে চায় তারা।
২০০৭ সালে রাজ্যের লাভজনক পদ সংক্রান্ত আইনে ১১৫টি পদ লাভজনক বলে ঘোষণা হয়। ২০১১ সালের সংশোধিত আইনে তা বাড়িয়ে ১২৬ করা হয়। ১২ ধরনের পদকে অলাভজনক বলেও উল্লেখ করা হয়। তবে কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান পদটি লাভজনক না লাভজনক নয়, তার কোনও উল্লেখ নেই সেখানে। ২০০৭ সালের আইনের কথা উল্লেখ করে চেয়ারম্যান পদটি লাভজনক থেকে ছাড়ের কথা বলা আছে বলে কমিশনকে পাঠানো জবাবি চিঠিতে জানায় রাজ্য। কিন্তু কমিশনের দাবি, তাদের কাছে দু’টি আইনের সব রেকর্ড রয়েছে।
আরও পড়ুন: আজ রাজ্যে অমিত শাহ, দরবারে কি উঠবে ৩৫৬
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান পদটি নিয়ে সুস্পষ্ট উল্লেখ না থাকায় এই ‘বিতর্ক’ ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। অনেকের মতে, সেখান থেকে কোনও সুবিধা নেন না ফিরহাদ। তা হলে প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান পদটি লাভজনক হয় কী করে। গত ২২ জুন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে পাঠানো চিঠিতে রাজ্যপালের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব সতীশ তিওয়ারি লেখেন, ফিরহাদ হাকিমের বিধায়ক পদ খারিজের বিষয়ে দু’টি অভিযোগপত্রে আবেদন করা হয়েছে। গত কয়েক মাস এই বিষয়ে ‘বিতর্ক’ চলছে।
তবে কমিশনের সিদ্ধান্ত একবারে ‘চূড়ান্ত’ না-ও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ‘তারকা প্রচারক’-এর তালিকা থেকে কমল নাথকে সরানো নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের উপর সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের প্রসঙ্গ টানছেন অনেকে।