অতিমারিতে প্রিয়জনের সুস্থতা কামনা করে রাত জাগছেন হাজার হাজার মানুষ। তার মধ্যেই চূড়ান্ত অমানবিকতার ছবি ধরা পড়ল রাজ্যে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাজপুর সৈকত থেকে উদ্ধার করা হল এক বৃদ্ধাকে। হাতে স্যালাইনের চ্যানেল এবং মুখ থেকে লালা পরা অবস্থায় ওই মহিলার নাতি তাঁকে সেখানে ফেলে পালিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে সমুদ্র সৈকতে ওই মহিলাকে কাতরাতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘক্ষণ তাঁকে ও ভাবে একা পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ দেখা দেয়। কিন্তু বৃদ্ধা করোনায় সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন ভেবে আতঙ্কে তাঁর কাছে ঘেঁষার সাহস পাচ্ছিলেন না কেউ। শেষমেশ পুলিশে খবর দেওয়া হয়। তারাই মহিলাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
গোটা ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী সুকুমার রায় নামের এক স্থানীয় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘‘বৃদ্ধাকে দেখতে অনেকেই ভিড় করেছিলেন সৈকতে। কিন্তু করোনার ভয়ে কাছে যাচ্ছিলেন না কেউ। বাধ্য হয়েই পুলিশের স্মরণাপন্ন হই। পুলিশ এলে পিপিই কিট পরে আমিও হাত লাগাই। বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করে এসেছি।’’
সুকুমার জানিয়েছেন, ওই বৃদ্ধা করোনা আক্রান্ত কি না, এখনও জানা যায়নি। তবে গুরুতর অসুস্থ তিনি। উদ্ধারের সময় হাতে স্যালাইনের চ্যানেল ছিল। লালা পড়ছিল মুখ থেকে। ঠিক মতো কথা বলতে পারছিলেন না। হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর তাঁর পরিচয় জানার চেষ্টা করে মন্দারমণি উপকূল থানার পুলিশ। তাতে তিনি কলকাতার শ্যামবাজারের বাসিন্দা বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
পুলিশকে দেওয়া বৃদ্ধার বয়ান উদ্ধৃত করে সুকুমার বলেন, ‘‘বিকেল ৪টে নাগাদ নাতির সঙ্গে গাড়িতে চেপে তাজপুর পৌঁছন ওই বৃদ্ধা। সৈকতে তাঁকে নামিয়ে জিনিস কেনার নাম করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান নাতি। আর ফেরেননি।’’ সুকুমারের বক্তব্য, ‘‘কেউ এতটা অমানবিক আচরণ করতে পারেন, ভাবা যায় না। নিজের মা হলে কি এ ভাবে পড়ে থাকতে দেখতে পারতাম? তাই পিপিই কিট পড়ে উদ্ধারে নামি।’’
যদিও কোন পরিস্থিতিতে বৃদ্ধাকে একা ফেলে পালাতে হয়েছে তাঁর নাতিকে, সেটাও ভেবে দেখা উচিত বলে মত স্থানীয়দের একাংশের। এই মুহূর্তে দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালেই রয়েছেন বৃদ্ধা। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, এখন স্থিতিশীল তিনি। নিজে থেকে নড়াচড়া করছেন। চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছেন। তবে শরীর অত্যন্ত দুর্বল। আগামী কয়েক দিন তাঁর চিকিৎসা চলবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।