ব্যস্ত কুরিয়ার সংস্থা। অন্যদের সঙ্গে পাঁচ যুবকও প্যাকেটবন্দি নুডলস পাঠানোর জন্য সেখানে হাজির। মুহূর্তে ঘিরে ফেলল নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)। ধরা পড়ে গেল পাঁচ জনই। তাদের প্যাকেটে মেলে আট কিলোগ্রাম চরস।
নেপাল সীমান্ত থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে প্রধাননগরের ওই কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসে ধৃত পাঁচ জনকে জেরা করে তদন্তকারীরা হদিস পান এক মহিলার। পানিট্যাঙ্কির ওই মহিলাই মাদক পাচার চক্রটির নেপাল ও ভারতের কর্মীদের সমন্বয়ের দায়িত্বে আছে বলে জানায় ধৃতেরা। শনিবার ধরা পড়ার পরে তারা কবুল করে, বেলা বর্মণ নামে ওই মহিলাকে আরও দুই কিলোগ্রাম চরস রাখতে দিয়েছে তারা। এনসিবি-র পূর্বাঞ্চলের অধিকর্তা দিলীপ শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বে কর্মী-অফিসারেরা রবিবার সকালে বেলার বাড়িতে হানা দেন।
নেপাল থেকে শনিবার আনা যে-দুই কিলোগ্রাম চরসের সন্ধানে বেলার বাড়িতে হানা দেওয়া হয়েছিল, তা পাওয়া যায়নি। বেলার ছেলে সেই চরস নিয়ে বাংলাদেশে চলে গিয়েছে বলে জেনেছেন তদন্তকারীরা। বেলার কাছে পাওয়া যায় ৪০ গ্রাম হেরোইন, ১৪০ গ্রাম মেটকোলেন, ২৮০ গ্রাম কোকেন। মেটকোলেন চিনির মতো দানা দানা এক ধরনের মাদক। ইউরোপে এই মাদকের চাহিদা খুব।
নেপাল থেকে ৩২ কেজি চরস আনা হচ্ছে বলে খবর ছিল এনসিবি-র কাছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যারা জালে পড়ল, তাদের জেরা করে জানা যায়, নুডলসের প্যাকেটে লুকিয়ে এই দফায় ১০ কেজি চরসই আনা হয়েছে। তারই মধ্যে দু’কেজি দেওয়া হয়
পানিট্যাঙ্কির ওই মহিলাকে। বেলার কাছে চরস না-মিললেও অন্যান্য মাদক রাখার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এনসিবি-র খবর, ধৃত অন্য পাঁচ জনের নাম সোমেশ লামা, কৃষ্ণবাহাদুর তামাং, বাবলু পাইয়ার, উত্তম প্রধান ও মিঠু কামাট। ওই পাঁচ জনই নেপালের নাগরিক। জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, তারা নেপাল থেকে ভারতে ঢুকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদক পাচার করত বিদেশে। শনিবার ওই চরস পাচারের কথা ছিল হংকংয়ে। ভারতে ওদের তরফে পুরো কাজ দেখত বেলা। ওই আন্তর্জাতিক মাদক পাচার চক্রটিকে কব্জা করতে বিএসএফ-কে পাশে পেয়েছে এনসিবি। আটক মাদকের বাজারদর প্রায় এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা।
কুরিয়ারে বিভিন্ন ধরনের মালপত্র পাঠানোর ক্ষেত্রে এখন কড়াকড়ি খুব। সুরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে চক্রটি বিদেশে মাদক পাচার করত কী ভাবে?
এনসিবি সূত্র জানাচ্ছে, ওই চক্রে যুক্ত নেপালিরা চরস, হেরোইন, কোকেন, মেটকোলেন নিয়ে চলে আসত ভারতে। পানিট্যাঙ্কির ওই মহিলার কাছে সাময়িক ভাবে রেখে পরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তা পৌঁছে দেওয়া হতো নির্দিষ্ট ঠিকানায়। নুডলসের প্যাকেটে চরস পাচারের ছক দেখে এনসিবি-র অনেকে কিছুটা বিস্মিত। শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘নুডলসের প্যাকেটটি এমন ভাবে প্যাক করা ছিল যে, বাইরে থেকে দেখে নুডলস ছাড়া আর কিছু বলে সন্দেহ করার অবকাশ বিশেষ ছিল না।’’
শ্রীবাস্তব জানান, শুধু নুডলসের প্যাকেট নয়, কখনও কখনও বইয়ের মধ্যেও গর্ত করে মাদক পাঠানো হয়। তার জন্য বিশেষ ভাবে বেছে নেওয়া হয় ধর্মপুস্তক। এই পাচারের কাজে একটি বিশেষ কুরিয়ার সংস্থাকেই ব্যবহার করা হচ্ছিল।