Crime

দুর্ঘটনাগ্রস্তদের সাহায্য করবেন? চাকরি আছে, এই বলে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রতারণা বিভিন্ন জেলায়

দুর্ঘটনাগ্রস্তদের উদ্ধারে বহু কর্মী প্রয়োজন। বেতন মাসিক ২৫ হাজার টাকা। এমনই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিল ‘রোড সেফটি অর্গানাইজেশন’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২১ ২১:০৯
Share:

ফিল্মি কায়দায় প্রতারণা। নিজস্ব চিত্র

এ যেন উলটপুরাণ! চলচ্চিত্রের দৃশ্য এ বার উঠে এল বাস্তবে। ধাবায় ডেকে টাকার বিনিময়ে চাকরির শপথ পত্রে সই করানো হচ্ছিল বহু চাকরিপ্রার্থীকে। ঠিক যেমনটা দেখা গিয়েছিল ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নীরজ পাণ্ডে পরিচালিত ছায়াছবি ‘স্পেশাল ২৬’-এ। অবশ্য বাস্তবে ছায়াছবির মতো শেষ হাসি হাসতে পারেনি প্রতারণা চক্রের পাণ্ডারা। ওই প্রতারণা চক্রের আট পাণ্ডাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই ঘটনা মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের মেমারির।

Advertisement

রাস্তায় দুর্ঘটনাগ্রস্তদের উদ্ধারে বহু কর্মী প্রয়োজন। বেতন মাসিক ২৫ হাজার টাকা। এমনই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিল ‘রোড সেফটি অর্গানাইজেশন’ নামে একটি ভুয়ো সংস্থা। বিভিন্ন জেলার চাকরিপ্রার্থীদের থেকে ওই চক্রটির পাণ্ডারা টাকা তুলছিল বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত ফাঁস হয়ে গেল সেই চক্রের পর্দা। মঙ্গলবার মেমারি থেকে যে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের থেকে মিলেছে নগদ ১ লক্ষের বেশি টাকা এবং বিভিন্ন নথিপত্র। মঙ্গলবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মেমারির ওই ধাবায় হানা দেয় পুলিশ। পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহরায় বলেন, ‘‘চাকরি দেওয়ার নামে একটি প্রতারণা চক্রের হদিশ পাই। সেখানে পুলিশ যায়। ওখানে চাকরি পাওয়ার আশায় যাঁরা গিয়েছিলেন তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়। তার ভিত্তিতে ওই ৮ জন গ্রেফতার হয়েছে।’’

ধৃতদের থেকে বিভিন্ন নথি পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলছেন, ‘‘এই চক্রটি কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রশিক্ষণ দিত এবং টাকা নিত। ধৃতদের থেকে নগদ ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া রাবার স্ট্যাম্প, পেন ড্রাইভ, মোবাইল ফোন পাওয়া গিয়েছে।’’ মঙ্গলবার চাকরিপ্রার্থীদের শপথপত্রে সই করার কথা জানিয়েছিল ওই চক্রটির পাণ্ডারা। শপথ পত্রে সই করানোর জন্য ৩৩ জন চাকরিপ্রার্থীর থেকে ৩ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি পুলিশের। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ধৃতরা চাকরিপ্রার্থীদের কাছে দাবি করেছিল, তারা রাজ্যপাল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতরে চিঠি পাঠিয়েছে। সেই চিঠির প্রতিলিপি চাকরিপ্রার্থীদেরও দেখানো হয়েছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ওই সব নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

মেমারিরই বাসিন্দা সত্যম রায় নামে এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনাগ্রস্তদের আমরা আহতদের উদ্ধার করব, এমনই চাকরির কথা বলেছিল ওরা। বলা হয়েছিল, আমাদের সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। বারাসতে প্রশিক্ষণও হয়। আমার প্যানেলে নাম ছিল। আমরা দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করছিলাম। সম্প্রতি শুনি চাকরি দেওয়া হবে। তার জন্যও টাকা নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের ছবি দেওয়া নথি দেখানো হয়েছিল।’’ মেমারির ওই ধাবায় আসা আর এক যুবক ছোটন ঘোষ বলেন, ‘‘এত দিনে বুঝেছি আমরা ঠকে গিয়েছি। কিন্তু যে ভাবে ফিউচার ইন্ডিয়া নামে এক সংস্থা আমাদের নিয়ে তিন বছর ধরে নানা প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল, তাতে কখনও এমন মনে হয়নি।’’

পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে ৬ জন মুর্শিদাবাদ, ১ জন বীরভূম এবং ১ জন হুগলির বাসিন্দা। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে ওই চক্রটি রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় জাল ছড়িয়েছিল এবং টাকা তুলছিল। ধৃতদের থেকে দেবকুমার চট্টোপাধ্যায় নামে নিমতার এক বাসিন্দার খোঁজ মিলেছে। তাঁর সন্ধান চলছে।

পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রতারণা চক্রের জাল ছড়িয়েছে একাধিক জেলায়। ওই ভুয়ো সংস্থার অপিস খোলা হয়েছিল হুগলির তারকেশ্বরেও। মঙ্গলবার মেমারিতে ওই চক্রের পাণ্ডারা গ্রেফতার হতেই পুলিশ তারকেশ্বরের ওই অফিসটি সিল করে দিয়েছে। আটক করা হয়েছে দু’জনকে। তারকেশ্বর-বৈদ্যবটি রোডের কাছে বৈদ্যপুর এলাকায় একটি দোতলা বিল্ডিংয়ে ‘রোড সেফটি অর্গানাইজেশন’-এর সাইনবোর্ড লাগিয়ে খোলা হয়েছিল ওই অফিসটি। স্থানীয়দের একাংশ দাবি করেছেন, গত ছয় মাস ধরে প্রতি দিন ৫০-৬০ জন চাকরিপ্রার্থীকে ওই অফিসে প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রশিক্ষণের জন্য বাঁকুড়া,বীরভূম এবং মেদিনীপুর থেকেও অনেকে যেতেন তারকেশ্বরে।

পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, বিনয় মালিক নামে তারকেশ্বরের মহেশপুর এলাকার এক বাসিন্দা ওই ভুয়ো সংস্থার চেয়ারম্যান। এ ছাড়া সুমন পাল এবং আনন্দকুমার সোরেন নামে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে সুমনের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের কালনার বিতেরা গ্রামে। আনন্দের বাড়ি খানাকুলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement