ব্রাত্য জানালেন, উপাচার্যদের নিয়ে কমিটি তৈরি করা হবে। সেই কমিটি মতামত দেওয়ার পরেই এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। — ফাইল ছবি।
এখনই স্নাতকে চার বছরের পাঠক্রম নয়। জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করা নিয়ে বিতর্কে এক প্রকার জল ঢাললেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি জানালেন, উপাচার্যদের নিয়ে কমিটি তৈরি করা হবে। সেই কমিটি মতামত দেওয়ার পরেই এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিন বছরের পরিবর্তে জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে এ রাজ্যে স্নাতক পাঠক্রম কি চার বছরেরই হবে? আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই কি চালু হবে নতুন নিয়ম? এই নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। শনিবার ভাষামেলায় যোগ দিয়ে ব্রাত্য বলেন, ‘‘এই নিয়ে কোনও কথা বলব না। চার বছরের স্নাতক কোর্স নিয়ে কমিটি গঠন করব। উপাচার্যদের নিয়ে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কী ভাবে কার্যকর করা হতে পারে, তা নিয়ে সেই কমিটি মত দেবে। তার পর এই বিষয় নিয়ে বলতে পারি।’’
চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু করার ক্ষেত্রে আরও একটি সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন শিক্ষামন্ত্রী। নতুন এই নিয়ম চালু করলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোরও দরকার। রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই পরিকাঠামো রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, ‘‘এই নির্দেশিকা নিয়ে আমরা বলতে পারি, পরিকাঠামো তৈরির জন্য যে প্রচুর টাকা দরকার, সেই বিষয়ে ইউজিসি (ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন) নীরব রয়েছে। সেই টাকাপয়সার ক্ষেত্রে পরিষ্কার নির্দেশিকা চাই।’’ শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামো দেখতে চায় রাজ্য। চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম আদৌ সেখানে চালু করা যায় কি না, তা দেখতে চাইছে রাজ্য।
এর আগে শিক্ষাবিদদের নিয়ে কমিটি তৈরি করে শিক্ষা দফতর। রাজ্যের শিক্ষানীতি কী হবে, তা নির্ধারণের জন্যই তৈরি হয়েছিল এই কমিটি। তবে সেই কমিটির রিপোর্ট সরকারি ভাবে এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এ বার উপাচার্যদের নিয়ে কমিটি তৈরি করার কথা জানিয়েছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর।
বিরোধিতা করলেও গত ১৭ মার্চ রাজ্য সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারী স্নাতক স্তরের ‘কারিকুলাম অ্যান্ড ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক’ আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর করতে রাজ্যের সাহায্যপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নির্দেশ দেয়। শুক্রবার উচ্চশিক্ষা দফতরের সহ-সচিবের স্বাক্ষরিত এই নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির রেজিস্ট্রারদের পাঠানো হয়। বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য ইউজিসি থেকে ৩১ জানুয়ারি সব রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তার পরেই রাজ্য ওই নির্দেশ দেয়।
‘কারিকুলাম অ্যান্ড ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক’ অনুযায়ী, অনার্স কোর্সের মেয়াদ হবে চার বছর। চার বছরের স্নাতক স্তরেই পড়ুয়ারা গবেষণা করতে পারবেন। এই চার বছরের কোর্সের মাঝপথে ছেড়ে দিলেও আবার তা শুরু করার সুযোগ থাকবে। সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণকান্তি নস্করের বক্তব্য, জাতীয় শিক্ষানীতিতে চার বছরের ডিগ্রি কোর্স এবং মাল্টিপল এগজ়িট ও এন্ট্রির যে কথা বলা হয়েছিল, তা রাজ্য সরকার কার্যকর করার মাধ্যমে ওই জনবিরোধী শিক্ষানীতি চালু করা শুরু করা হল। শিক্ষাবিদদের একাংশের মতে, এর ফলে ডিগ্রি পেতে গেলে এক বছর বেশি পড়তে হবে, তাতে ড্রপ আউট বাড়বে। তাই রাজ্যের বিজ্ঞপ্তির পর বিতর্ক আরও বেড়ে যায়। শনিবার সেই নিয়ে মত স্পষ্ট করে দিলেন ব্রাত্য।
শনিবার ভাষামেলায় এসে ব্রাত্য এ-ও জানিয়ে দেন যে, বাংলা ভাষা পড়তেই হবে। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি ইংরেজি মিডিয়াম হলেও পড়তে হবে। বেসরকারি স্কুলে বাংলা পড়ানোর দাবি জানাতে পারি। ফতোয়া দিতে পারি না। বেসরকারি স্কুলে আবেদন জানাতে পারি, তারা যেন বাংলা পড়ায়। আমার ধারণা, অধিকাংশ বেসরকারি স্কুলে বাংলা পড়ানো হয়। যাঁর যা মাতৃভাষা, তাঁর কাছে তা গুরুত্বপূর্ণ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন, মাতৃভাষার যেন সাড়ম্বর উদ্যাপন হয়। তাই এই ভাষামেলার আয়োজন। পশ্চিমবঙ্গে তো প্রথম, যে কোনও রাজ্যে এই প্রথম ভাষামেলা উদ্যাপন হল। এই রীতি জারি রাখা হবে।’’