বাবার প্রসঙ্গ টেনে নিয়োগ বির্তকে বাম আমলকে বিঁধলেন প্রয়াত কমল গুহের পুত্র উদয়ন গুহ। — ফাইল চিত্র।
বাবা মন্ত্রী ছিলেন বাম আমলে। ছেলে তৃণমূল আমলের মন্ত্রী। নিয়োগ দুর্নীতিতে এ বার বাবার ভূমিকাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন পুত্র। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, দলের স্বার্থে ‘দুর্নীতি’ করেছেন তাঁর বাবাও। বাম আমলের কৃষিমন্ত্রী কমল গুহের পুত্র উদয়ন গুহ শনিবার এমন মন্তব্য করেছেন। উদয়ন বর্তমান সরকারের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। উদয়নের এই মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে সিপিএম।
উদয়নের মতে, যাঁরা আজকে রাস্তায় নেমে ‘যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে’ বলছেন তাঁদের পূর্বসূরিরা ‘যোগ্যদের বঞ্চিত করে’ই চাকরি দিয়েছেন। বাম আমলে সর্ব ক্ষণের কর্মীদের ভাতা না দিতে পেরে তাঁদের স্ত্রীদের জন্য চাকরির ‘বন্দোবস্ত’ করে দেওয়া হত বলেও অভিযোগ করেছেন উদয়ন। বাবার কথা তুলে ধরে উদয়ন বিঁধেছেন বাম আমলকেই।
সম্প্রতি তৃণমূলের তরফে একটি টুইট করা হয়। সেখানে একটি চিঠির প্রতিলিপি পোস্ট করে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলি চক্রবর্তীর ১৯৮৭ সালে চাকরি পাওয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। তৃণমূলের সেই অভিযোগ যদিও অস্বীকার করেন সুজন। ওই চিঠিকে মিলির কাজে যোগদানপত্র বলে দাবি করে সুজন দাবি করেন, বামফ্রন্ট আমলে নিয়োগে কোনও দুর্নীতি হয়নি। সেই আবহে নতুন বিতর্ক উস্কে দিলেন কমল-পুত্র উদয়ন। বাবার কথা বলতে গিয়ে উদয়ন বলেন, ‘‘দলের স্বার্থে তিনিও দুর্নীতি করেছেন। এটাকে দুর্নীতি বলব আমি। ৫ টাকা নিলে দুর্নীতি নয়, কিন্তু ৫০ হাজার টাকা বা ৫ লাখ টাকা নিলে দুর্নীতি? এটা হতে পারে না। আমি এখন আমার বাবাকে বাঁচানোর জন্য বলব যে, বাবা যেটা করেছেন সেটা সঠিক করেছেন, আর এখন অমুক যেটা করছেন সেটা ভুল করছেন বা সিপিএমের বিধায়ক যেটা করেছিলেন সেটা ভুল? বাবাও তো অনেককে চাকরি করে দিয়েছিলেন।’’
এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন উদয়ন। তিনি বলেন, ‘‘বাবার সামনে বসে তালিকা তৈরি হয়েছিল। বাবা সেই তালিকাকে এনডোর্স করে দিয়েছিলেন।’’ এই সূত্রেই উদয়নের ব্যাখ্যা, ‘‘সেখানে তো যোগ্য ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সেটা দুর্নীতির একটা অঙ্গ। এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। যারা আজকে রাস্তায় বসে যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলছে তাদের পূর্বসূরিরা যোগ্যদের বঞ্চিত করেই চাকরি দিয়েছে।’’
বাম আমলে দলীয় কর্মীদের স্ত্রীদের চাকরির ‘বন্দোবস্ত’ করা হত বলেও অভিযোগ করেছেন উদয়ন। তিনি বলেন,‘‘দলের সর্ব ক্ষণের কর্মীকে ভাতা দেওয়ার কথা দল থেকে। এ বার আমার ক্ষমতা নেই তাঁকে ভাতা দেওয়ার। আমি তাঁর স্ত্রীকে চাকরির বন্দোবস্ত করে দিলাম। সেটাও দুর্নীতি ছিল। আজ যদি কেউ চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়ে থাকে সেটাও দুর্নীতি।’’
কমল ফরওয়ার্ড ব্লক করতেন। শরিক দল হিসাবে বামফ্রন্টের সরকারে ১৯৭৭ সাল থেকে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী ছিলেন কমল। টানা ১৪ বছর ওই দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। পাশাপাশি, তাঁর দল ফরওয়ার্ড ব্লকের চেয়ারম্যানও ছিলেন। তবে ১৯৯১ সাল থেকে আর মন্ত্রী পদে থাকতে চাননি কমল। পাশাপাশি, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জমানায় সরকারে থেকেও একাধিক বার ‘বিরূপ’ মন্তব্য করেছিলেন কমল। যার জেরে অস্বস্তিতে পড়ে সেই সময়ের বাম সরকার। সেই ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে পরে তৃণমূলে যোগ দেওয়া উদয়নের মন্তব্য নতুন করে ইন্ধন জুগিয়েছে বাম আমলের নিয়োগ-বিতর্কে।
উদয়নের এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করেছে সিপিএম। এ নিয়ে সুজন বলেন, ‘‘ওঁর কণ্ঠস্বরে হতাশা ফুটে উঠছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা যা করেছেন তাকে বৈধ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন উনি। সেটা কোনও ভাবেই মেলে না। এই কথা বলে উনি বাবাকে ছোট করলেন, না কি নিজেকে ছোট করলেন তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। তবে এটা নজর ঘোরানোর চেষ্টা।’’