গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
রাজনৈতিক ছাত্র সংসদ, না কি অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল? দীর্ঘদিনের টানাপড়েনের সমাধান হতে চলেছে। রাজ্যে কলেজ নির্বাচনে রাজনৈতিক লড়াই বন্ধ করে অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল তৈরির আইন বানিয়েছিল দ্বিতীয় তৃণমূল সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানার সেই আইনে এ বার বদল আনতে চান স্বয়ং মমতা। বৃহস্পতিবার তা প্রকাশ্যে এনেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
সম্প্রতি নতুন করে কলেজে কলেজে নির্বাচন চালুর কথা বলেছেন মমতা। জানিয়েছেন, পুজোর পরেই শুরু হবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এর পরে ব্রাত্য জানালেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করতে শীঘ্রই ২০১৭ সালে আনা তৃণমূল সরকারের বিলে সংশোধন আনা হবে। ব্রাত্য জানিয়েছেন, দলনেত্রী এবং দল আর ওই নীতি আঁকড়ে থাকতে চায় না। তিনি বলেন, ‘‘২০১৭ সালে একটি আইন রাজ্য বিধানসভায় পাশ করানো রয়েছে। লিংডো কমিশনের সুপারিশ মেনে প্রতীকহীন নির্বাচন। মুখ্যমন্ত্রী এবং আমাদের দল এখন সেটা চাইছে না। আমরা চাইছি, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিক, দলগত ভাবেই লড়ুক।’’ এই বিষয়ে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে ব্রাত্য আরও বলেন, ‘‘আমরা ২০১৭ সালের বিলটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিধানসভায় নিয়ে আসব এবং পুজোর পরে দফায় দফায় শান্তিপূর্ণ ও রক্তপাতহীন নির্বাচন করতে চাই।’’ এ নিয়ে তিনি সব রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলেও জানিয়েছেন ব্রাত্য।
রাজ্যে পরিবর্তনের পরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কলেজে কলেজে গোলমাল শুরু হয়। আর দ্বিতীয় তৃণমূল সরকার ২০১৬ সালে আসার পরে নির্বাচনই বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে শেষ বার রাজ্যে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র সংসদ ভোট হয়েছিল। সেই সময়ে রাজ্যের অধিকাংশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েই ক্ষমতায় আসে টিএমসিপি। তার পর বিক্ষিপ্ত ভাবে যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, রবীন্দ্রভারতীর মতো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হলেও তা সার্বিক ছিল না। এ বার সারা রাজ্যে ছাত্র-ভোট করানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভা থেকে মমতা বলেন, ‘‘অপনারা যদি শান্তিপ্রিয় ভাবে নির্বাচনটা করতে পারেন তা হলে আমি জেলায় জেলায় নির্দেশ দিয়ে দেব।’’ তবে আইন বদলে পুজোর পরেই কী ভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন সম্ভব, তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানাননি শিক্ষামন্ত্রী। তবে কি বিধানসভার চলতি বাদল অধিবেশনেই আসবে সংশোধনী বিল? এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার ব্রাত্য আইন বদলের কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে রাজ্য সরকার যে আইন তৈরি করে নেয় তাতে বলা হয়েছিল, উপাচার্যেরা শিক্ষকদের মধ্য থেকে ছাত্র সংসদের সভাপতি, সহ-সভাপতি এবং কোষাধ্যক্ষ মনেনীত করবেন। পরে ২০১৮ সালে আরও একটি বদল আসে। তাতে প্রতিটি ক্লাসের প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি ছাত্র কাউন্সিলের সদস্যদের সহকারী কোষাধ্যক্ষ করার সিদ্ধান্ত হয়। ছাত্র কাউন্সিলের জন্য সরকারের বরাদ্দ অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ উঠলেই এটা হয়। সব মিলিয়ে বন্ধ হয়ে থাকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। যা নিয়ে টিএমসিপিও বিভিন্ন সময়ে আপত্তি তোলে। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এ নিয়ে তৃণমূলের ছাত্র নেতারা দরবারও করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও নির্বাচন চালু হয়নি। এ বার উদ্যোগী রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার তেমনই ইঙ্গিত মিলল ব্রাত্যের কথায়।