স্কুলে ফিরছে লাফ দড়ি, চু কিত-কিত

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় সেই সব হারিয়ে যাওয়া খেলাগুলিকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর।

Advertisement

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৩
Share:

ছবি: সংগৃহীত

স্কুলের সামনের ফালি জায়গায় কচিকাঁচাদের ভিড়। ক্লাস শুরুর আগে কিংবা টিফিনের সময় পড়ুয়ারা দলবেঁধে ব্যস্ত খেলাধুলায়। কোনও দল লাফ দড়ি খেলছে তো অন্য দল খেলছে চু কিতকিত। ক্লাসের ঘণ্টা পড়তেই তারা ছুটল ক্লাসরুমের দিকে। এক সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে পড়ুয়ারা এমন সব খেলাতে মজে থাকত। তার পরে ধীরে ধীরে এই খেলাগুলো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। আধুনিক প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অনেকেই বুঁদ হয়ে থাকে মোবাইল কিংবা কম্পিউটারের সব গেমে।

Advertisement

এমন পরিস্থিতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনায় সেই সব হারিয়ে যাওয়া খেলাগুলিকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। গত শুক্রবার রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলেছে— ঐতিহ্যশালী ও দেশীয় খেলাগুলিকে প্রত্যেক দিনের ক্লাসে রুটিনের মধ্যে ঢুকিয়ে নিতে হবে। প্রাক্‌ প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ওই ক্লাস করাতে হবে। গাদি, লাফ দড়ি, চু কিতকিত-সহ নানা ধরনের খেলাগুলো স্কুল চত্বরে করাতে হবে। ছুটি কিংবা মিডডে মিলের আগে ওই ক্লাস করাবেন এক জন শিক্ষক। পুরো বিষয়টি তদারকি করবেন প্রধান শিক্ষক।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এর ফলে স্কুলগুলো আরও আকর্ষণীয় হবে। এই খেলাগুলো পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য ও চরিত্র গঠনেও সাহায্য করবে।’’

Advertisement

শিক্ষা দফতরের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই। দক্ষিণ হরিহরপাড়ার আব্দুল্লাহ শেখ বলছেন, ‘‘আমরা তো ছেলেবেলায় এ সব খেলাই করেছি। কিন্তু এখন সে সব হারিয়ে গিয়েছে। স্কুলগুলোর মাধ্যমে সে সব খেলা ফিরে এলে ভালই হবে।’’ লালগোলার লস্করপুরের অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মহম্মদ আফজাল হোসেন বলছেন, ‘‘আমরা রেলগাড়ি, কানামাছি, গাদি খেলতাম। সে সব এখন নেই বললেই চলে।’’ রানিনগরের জেসমিন বিবি বলছেন, ‘‘চু-কিতকিত কিংবা লাফ দড়ি খেলার নেশায় ক্লাস শুরুর ঘণ্টাখানেক আগেই বিদ্যালয়ে পৌঁছে যেতাম। ক্লাসের ঘণ্টা পড়ার আগে পর্যন্ত চলত সেই সব খেলা। কিন্তু কালের নিয়মে সে সব খেলা হারিয়ে গিয়েছে। সরকার এ সব নিয়ে নতুন নির্দেশিকা দেওয়ায় ভাল লাগছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা পুরনো সব খেলা ফিরে পাবে।’’

দৌলতাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক দেবাশিস দাস বলছেন, ‘‘প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা নামে একটি বিষয় রয়েছে। সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা না থাকায় সেটি সে ভাবে পড়ানো হয় না। খেলা নিয়ে নয়া নির্দেশিকার ফলে পড়ুয়াদের ভাল হবে। পড়াশোনার একঘেয়েমি দূর করতে খেলাধুলারও প্রয়োজন। এ বারে অন্য বিষয়ের মতো ক্লাসের রুটিনের মধ্যে এনে খেলাধুলা করালে পড়াশোনা আরও ভাল হবে।’’

ডোমকলের এক প্রাথমিক শিক্ষক জানাচ্ছেন, আগে বিদ্যালয়গুলিতে শারীরশিক্ষার ক্লাস ছিল। ব্রতচারীর প্রশিক্ষণও দেওয়া হত। কিন্তু ধীরে ধীরে খেলাধুলায় জোর কমেছে। এখনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য ও শারীরশিক্ষা নামে বই রয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট নির্দেশিকা না থাকায় সে ভাবে তা পড়ানো হয় না।

পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি শুভজিৎ সিংহ বলছেন, ‘‘বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মোবাইল, কম্পিউটার ছেড়ে মাঠমুখী হয় না। এই পরিস্থিতিতে এমন নির্দেশ উপকারী।’’

নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক নবেন্দু সরকার বলছেন, ‘‘ক্লাসের রুটিনের মধ্যে রেখে ওই খেলা বাধ্যতামূলক করায় পড়ুয়াদেরই ভাল হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement