ফি-বছর লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া কমছে স্কুলে, উদ্বেগ রাজ্যের শিক্ষা শিবিরে

পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকে ছাত্রছাত্রী ছিল ৭০,০৩,৫৪৯ জন। ২০১৭-১৮ সালে সংখ্যাটা কমে হয়েছে ৪৩,৯৮,৮০৫। অর্থাৎ প্রায় ৩০ লক্ষ পড়ুয়া কমেছে এক বছরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০৫:১০
Share:

মিড-ডে মিল। স্কুলের পোশাক। সাইকেল। নানা সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সরকারি, সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা হুহু করে কমছে। সম্প্রতি সর্বশিক্ষা মিশনের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে এই বছরের রিপোর্ট পাশাপাশি রাখলে দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরে প্রায় ৩০ লক্ষ পড়ুয়া কমেছে। উচ্চ মাধ্যমিকের ছবি এতটা খারাপ নয়। তবে সেখানেও পড়ুয়া কমেছে তিন লক্ষের মতো। স্কুলে এ ভাবে ছাত্রছাত্রী কমতে থাকায় শিক্ষা শিবির উদ্বিগ্ন।

Advertisement

পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকে ছাত্রছাত্রী ছিল ৭০,০৩,৫৪৯ জন। ২০১৭-১৮ সালে সংখ্যাটা কমে হয়েছে ৪৩,৯৮,৮০৫। অর্থাৎ প্রায় ৩০ লক্ষ পড়ুয়া কমেছে এক বছরে। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ প্রাথমিকে ছাত্রছাত্রী ছিল ৭৪,৫০,৬৬৭ জন। ২০১৭-১৮ সালে সংখ্যাটা ৪৬,৪৯,১২৩। ২০১৬-১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ১৯,৬৬,১০৪। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে তা কমে হয়েছে ১৬,২১,০৮৬। অর্থাৎ তিন লক্ষেরও কিছু বেশি পড়ুয়া কমেছে এক বছরে।

পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে কেন?

Advertisement

শিক্ষক মহল ও শিক্ষা সংগঠনগুলির একাংশ মনে করেন, স্কুলে মিড-ডে মিল বা সাইকেল এক শ্রেণির মানুষের কাছে আকর্ষক বিষয় হতে পারে। কিন্তু সকলের ক্ষেত্রে নয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত রায় বলেন, ‘‘স্কুলগুলির পরিকাঠামো থেকে শুরু করে পঠনপাঠন আরও ভাল হওয়া দরকার। বেশির ভাগ স্কুলের শৌচালয়ের অবস্থা ভাল নয়। পড়াশোনার যথাযথ পরিকাঠামো নেই বলেই অনেকে ছেলেমেয়েদের এই সব স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন না।’’ সৌগতবাবুর বক্তব্য, অনেক সময় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কাজকর্মের মধ্যেও সঙ্গতি থাকছে না। মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ গ্রেড ‘এএ’, অথচ উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ গ্রেড হিসেবে দেওয়া হয় ‘ও’। অনেক অভিভাবকের প্রশ্ন, দু’টি স্তরে সর্বোচ্চ গ্রেড ভিন্ন হবে কেন?

অনেকের মতে, এখন মফস্‌সল শহরগুলিতেও আইসিএসই বা সিবিএসই বোর্ডের বেসরকারি স্কুল প্রচুর। ওই সব স্কুলে পড়াশোনার মান ভাল মনে করে অনেকে সন্তানদের সেখানে ভর্তি করাচ্ছেন। এক শিক্ষকের প্রশ্ন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সরকারি স্কুলের শিক্ষকেরাও ছেলেমেয়েদের সরকারি স্কুলে দিচ্ছেন না। তা হলে এক জন সাধারণ অভিভাবক কোন ভরসায় সরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাবেন?’’

বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের বক্তব্য, প্রতি বছর হুহু করে পড়ুয়া কমে যাওয়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। অভিভাবকদের অনাস্থার কারণেই এটা হচ্ছে। এই সব স্কুল বাঁচাতে এখনই নজর দেওয়া উচিত সরকারের।

শিক্ষা দফতরের কর্তারা অবশ্য মনে করেন, সরকারি স্কুলে ছাত্রছাত্রী ভর্তির চিত্রটা এতটা খারাপ নয়। শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, এ বার এত কম পড়ুয়ার সংখ্যা কম দেখানোর কারণ, স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রী গণনার পদ্ধতি আলাদা হয়ে গিয়েছে। ‘‘এত দিন স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কুলের হাজিরা খাতা দেখে বলে দিতেন, কত পড়ুয়া আছে। এখন কিন্তু এ ভাবে গণনা হচ্ছে না। প্রত্যেক পড়ুয়ার জন্য আলাদা ডাটা বেস বা তথ্য ভাণ্ডার তৈরি হচ্ছে। সেখানে ছাত্র বা ছাত্রীর সবিস্তার তথ্য থাকছে। পড়ুয়াদের সেই সবিস্তার ডেটা বেস প্রতিটি স্কুল এ বছর পাঠাতে পারেনি। তাই ভর্তির প্রকৃত হিসেব মিলছে না,’’ বলেন ওই শিক্ষাকর্তা। তিনি জানান, এ বার সব স্কুলকে ঠিক সময়ে পড়ুয়াদের ডেটা বেস পাঠাতে বলা হচ্ছে।

ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা হ্রাসের হার যা দেখানো হয়েছে, তাতে যান্ত্রিক ত্রুটিরও একটা ভূমিকা আছে বলে মনে করছেন অনেক শিক্ষক। তাঁরা মনে করেন, কম্পিউটারের যে-সার্ভারের মাধ্যমে এই হিসেব দেওয়া হয়েছে, তাতে কিছু অসঙ্গতি থেকে যেতে পারে। তবে সামগ্রিক ভাবে শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, যান্ত্রিক সমস্যার সংখ্যার সামান্য হেরফের হলেও পড়ুয়া যে কমছে, তাতে সন্দেহ নেই। এবং কেন সংখ্যাটা কমছে, যান্ত্রিক সমস্যায় তার সদুত্তর নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement