বুধবার অনুব্রতকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। —ফাইল চিত্র
বীরভূমের ‘রাজ্যপাট’ ছেড়ে কলকাতার নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের হেফাজত। সেখান থেকে আসানসোলের জেল। অতঃপর তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঠিকানা কি হতে চলেছে তিহাড় জেল?
এই প্রশ্নটা বড় হয়ে দেখা দেওয়ার প্রাথমিক কারণ, গরু পাচারের পাহাড়প্রমাণ টাকা কোথায় গিয়ে জমা হয়েছে, তা জানতে সামগ্রিক তদন্তের দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র উপরে। এখনও পর্যন্ত গরু পাচার মামলায় সিবিআই যতটুকু তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে, তাতে একটি বিষয়ে তদন্তকারীরা নিশ্চিত। তা হল, শুধু বীরভূম জেলা থেকেই গরু পাচারে বিপুল পরিমাণ টাকা উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সেই তদন্তকে মূলধন করেই কোমর বাঁধছে ইডি।
১৪ দিনের সিবিআই হেফাজতের শেষে বুধবার অনুব্রতকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে চাইতে পারে ইডি। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, তাদের আবেদন মঞ্জুর হলে অনুব্রতকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে দিল্লি উড়ে যেতে পারে তারা। কারণ, কয়লা পাচারের মতো গরু পাচার মামলাও দিল্লিতে সরিয়েছে ইডি। একই ভাবে অনুব্রতের প্রাক্তন দেহরক্ষী সেহগাল হোসেনকেও দিল্লি নিয়ে যেতে চায় তারা।
কয়েক মাস আগে সিবিআইয়ের মামলায় জামিন পাওয়ার পরে গরু পাচার মূল অভিযুক্ত এনামুল হককে দিল্লির সদর দফতরে তলব করেছিল ইডি। সেখানেই এনামুলকে গ্রেফতার করা হয়। গরু পাচারের মামলায় এনামুল এখন আছেন দিল্লির তিহাড় জেলে। অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেলে এবং ইডি-র হেফাজতের মেয়াদ ফুরোলে তাঁকেও সেই জেলে রাখা হতে পারে।
ইডি সূত্রের খবর, শুধু অনুব্রত ও সেহগাল নয়, গরু পাচারের লভ্যাংশের টাকা আরও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে পৌঁছেছে। তদন্তকারীদের দাবি, গরু পাচারের পাশাপাশি বীরভূম জেলায় পুলিশ ও প্রশাসনের যোগসাজশে বেআইনি ভাবে পাথর আর বালিও পাচার করা হয়েছে। গত এপ্রিলে পাচার চক্রের বখরা নিয়ে বিবাদের জেরে বগটুইয়ে তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন হন বলে সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে। সিবিআইয়ের পাশাপাশি সেই ঘটনায় তদন্ত করছে ইডি-ও।
তদন্তকারীদের দাবি, অনুব্রত ও সেহগাল বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে জড়িত। অনুব্রত, তাঁর ঘনিষ্ঠ বিধায়ক এবং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন সম্পত্তির হদিস পাওয়া গিয়েছে। অনুব্রতের মেয়ে সুকন্যা ও প্রয়াত স্ত্রী ছবির নামাঙ্কিত বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি কেনা হয়েছে বলে তদন্তে জানতে পেরেছে সিবিআই।
ইডি সূত্রের খবর, গত কয়েক মাসে অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনুব্রত ও সেহগালের কোটি কোটি টাকার বেআইনি লেনদেনের তথ্য মিলেছে।