নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইডির আতশকাচের নীচে টলিউডের চার অভিনেত্রী। প্রতীকী ছবি।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) আতশকাচের নীচে রয়েছেন টলিউডের চার অভিনেত্রী। তাঁদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তবে এখনই তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলে খবর ইডি সূত্রে। এখন তাঁদের ডেকেও পাঠানো হচ্ছে না। খোঁজখবর নিয়ে যদি তাঁদের ডেকে পাঠিয়ে প্রশ্ন করার প্রয়োজন হয়, তা হলে তাঁদেরও বনি সেনগুপ্তের মতোই নোটিস পাঠানো হবে। ইডির অনুমান, তেমন হলে তাঁরা ডাক ‘এড়িয়ে’ যাবেন না।
ইডি নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার তলব করেছিল টলিউড অভিনেতা বনি সেনগুপ্তকে। তিনি এত্তেলা পেয়ে এক দিন আগে, বৃহস্পতিবারেই ইডি দফতরে হাজিরা দিয়েছেন। ইডি সূত্রের বক্তব্য, দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের ব্যাঙ্কের নথিতে বনির নাম পাওয়া গিয়েছে। তার পরেই তাঁকে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ডেকে পাঠিয়েছে ইডি।
টলিউডের যে চার অভিনেত্রী নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে আপাতত ইডির ‘নজরে’ রয়েছেন, আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তবে সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে এক জন টালিগঞ্জের প্রথম সারির নায়িকা। একাধিক জনপ্রিয় বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। প্রশংসা কুড়িয়েছেন মূলস্রোতের বাইরে ভিন্ন ঘরানার (আর্ট ফিল্ম) ছবিতে অভিনয়ের কারণেও।
ওই চার জনের মধ্যে অপর এক অভিনেত্রী কুন্তলের সংস্থার তৈরি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে (শর্ট ফিল্ম) অভিনয় করেছেন বলে ইডি সূত্রে দাবি। সেই ছবি সংক্রান্ত কাজের সময়েই কুন্তলের সঙ্গে তাঁর প্রাথমিক পরিচয় হয়। নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে লতায়পাতায় তিনিও জড়িত আছেন কি না, আপাতত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইডির তালিকায় তৃতীয় নামটিও টালিগঞ্জে পরিচিত। এই অভিনেত্রী রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত বলে দাবি ইডি সূত্রের। রাজনীতির আঙিনাতেই কুন্তলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অনুমান। প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতিতে এক অভিনেত্রীর নাম আসছে জেনে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি এজলাসেই বলেছিলেন, তিনি সেই অভিনেত্রীর অভিনীত ছবি দেখতে চান। সেই অভিনেত্রীর ছবিও দেখতে চান। যদিও ইডির তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই অভিনেত্রীর নাম বা ছবি এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে আনা হয়নি। কিন্তু তিনি যে ‘নজরে’ রয়েছেন, তা গোপন করছেন না তদন্তকারী আধিকারিকদের একাংশ।
চতুর্থ যে অভিনেত্রী সম্পর্কে ইডি খোঁজ নিচ্ছে, তিনি অভিনেতা বনির ঘনিষ্ঠ। সেই সূত্রেই তাঁর উপরেও নজর রাখা হচ্ছে। কুন্তল সংক্রান্ত কোনও নথিতে তাঁর নাম পাওয়া গেলে তাঁকেও ডেকে পাঠাতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তবে এ নিয়ে এখনই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না ইডির আধিকারিকেরা। আপাতত তাঁরা বনিকে প্রশ্ন করছেন।
ইডির গোয়েন্দারা কুন্তলের নথিতে বনির নাম পেয়েছেন বলেই তাঁকে তলব করেছেন। কিন্তু কুন্তলের সঙ্গে ওই চার অভিনেত্রীর সরাসরি কোনও যোগাযোগ বা আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ এখনও মেলেনি। তাই ইডি আপাতত তাঁদের সম্পর্কে খোঁজখবর চালাচ্ছে। এখনই তাঁদের ডেকে পাঠানো হচ্ছে না। তেমন প্রয়োজন হলে অবশ্য তাঁদেরও নোটিস পাঠানো হবে।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে চলতি সপ্তাহে কুন্তলের কয়েক জন এজেন্টকেও তলব করেছে ইডি। হুগলির যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে। এর আগেও তাঁকে একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। কখনও তাঁর কাছ থেকে সম্পত্তির নথি চাওয়া হয়েছে। কুন্তলের সঙ্গে শান্তনুর টাকা লেনদেন হয়েছে কি না, নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে সেই টাকার সম্পর্ক আছে কি না, তা-ও জানার চেষ্টা করছে ইডি।