কীসের ভিত্তিতে ঋণ শান্তনুকে, ইডি-র প্রশ্নের মুখে ব্যাঙ্ক-কর্তা

মোটরবাইক কারখানা তৈরির জন্য ব্যাঙ্কঋণ নিয়েছিলেন জেনাইটিস-মালিক শান্তনু ঘোষ। তাঁকে কীসের ভিত্তিতে, কত টাকার ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছিল, তা জানতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ইডি-র তদন্তকারীরা ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান, শেষ পর্যন্ত ক’দফায় কত টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল শান্তনুকে। ইডি-র তদন্তে সাহায্য করতে ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ তাঁদের এক প্রতিনিধিকে বৃহস্পতিবার ইডি-র সল্টলেকের অফিসে পাঠিয়ে দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৪ ০৩:৩৮
Share:

একই গাড়িতে সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায় ও কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালত চত্বরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

মোটরবাইক কারখানা তৈরির জন্য ব্যাঙ্কঋণ নিয়েছিলেন জেনাইটিস-মালিক শান্তনু ঘোষ। তাঁকে কীসের ভিত্তিতে, কত টাকার ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছিল, তা জানতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ইডি-র তদন্তকারীরা ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান, শেষ পর্যন্ত ক’দফায় কত টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল শান্তনুকে। ইডি-র তদন্তে সাহায্য করতে ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ তাঁদের এক প্রতিনিধিকে বৃহস্পতিবার ইডি-র সল্টলেকের অফিসে পাঠিয়ে দেন।

Advertisement

ইডি সূত্রের খবর, শান্তনু কারখানা তৈরির জন্য ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ২০০ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছিলেন বলে জেরায় জানিয়েছেন। সেই তথ্য ঠিক কি না, ইডি-র তদন্তকারীরা ব্যাঙ্ক-প্রতিনিধির কাছে তা জানতে চান। জানতে চাওয়া হয়, কারখানা গড়তে ব্যাঙ্কঋণ নেওয়ার জন্য শান্তনু কী ধরনের প্রকল্প রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন? মোটা টাকা ঋণ পেতে ব্যাঙ্কের কাছে কী কী গচ্ছিত রেখেছিলেন জেনাইটিস-প্রধান? ঋণের জন্য শান্তনুর হয়ে প্রভাবশালী কোনও ব্যক্তি ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেছিলেন কি না?

আর কী জানতে চাওয়া হয়েছে ব্যাঙ্কের ওই প্রতিনিধির কাছে? শান্তনু জেরায় জানান, তাঁর কারখানা লোকসানে চলছিল। ইডি-র খবর, ব্যাঙ্কের প্রতিনিধির কাছে জানতে চাওয়া হয়, ওই তথ্য ব্যাঙ্কের কাছে ছিল কি না? থেকে থাকলে টাকা ফেরত পেতে ব্যাঙ্ক কী ব্যবস্থা নিয়েছিল? শান্তনু জানান, ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ তাঁর কারখানার অডিট করেছিলেন। তার রিপোর্ট পাওয়ার পরেই তিনি সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের কাছে কারখানা বিক্রি করে দেন। সে-কথা ঠিক কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে এ দিন। ইডি-র তদন্তকারীরা ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষের কাছে মোটরবাইক কারখানা সংক্রান্ত আরও কিছু নথি চেয়েছেন। এ দিন শান্তনুর মে-ফেয়ার রোডের বাড়িতে আরও এক দফা তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ইডি-র এক তদন্তকারী।

Advertisement

এ দিনই আলিপুর আদালতে সারদা মামলায় সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায় ও কুণাল ঘোষের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে সিবিআই। তাদের আশঙ্কা, অভিযুক্তেরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং সেই কারণেই জামিনে ছাড়া পেলে তাঁরা নথিপত্র নষ্ট করে ফেলতে পারেন। সিবিআইয়ের আর্জি, অভিযুক্তদের জেল-হাজতে রাখা হোক। কারণ হিসেবে তারা জানায়, তদন্ত প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। তিন মূল অভিযুক্তকে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করে নতুন তথ্য মিলেছে। সাক্ষীদের দিয়ে সেই সব তথ্য যাচাই করিয়ে নেওয়া দরকার। অভিযুক্তেরা জামিন পেলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। সেই জন্যও তাঁদের জেল-হাজতে রাখা প্রয়োজন।

দেবযানী ও কুণালের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা ও সৌম্যজিৎ রাহা জানান, তদন্ত এখনও প্রাথমিক স্তরে রয়েছে বলে সিবিআই যে-দাবি করছে, তা ভিত্তিহীন। তা হলে তো ধরে নিতে হয়, এক বছরেও পুলিশ, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা এসএফআইও তদন্তই করেনি!

আলিপুরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট হারাধন মুখোপাধ্যায় জানান, এই মামলায় অপরাধের মাত্রা বেশি। অনেকে আত্মহত্যাও করেছেন। এর পরে কুণাল কিছু বলার অনুমতি চান। বিচারকের অনুমতির পরে তৃণমূল সাংসদ জানান, অপরাধের মাত্রা যে অনেক বেশি, সেই ব্যাপারে তিনিও একমত। যাঁরা আত্মহত্যা করেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই সারদার এজেন্ট। তিনি (কুণাল) কিন্তু এজেন্ট ছিলেন না। কুণাল বিচারকের কাছে জানতে চান, এজেন্ট-বৈঠকে যাঁরা বক্তৃতা দিয়েছেন, তাঁদের কেউ ধরছে না কেন? দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক তিন অভিযুক্তের জামিনের আর্জি নাকচ করেন। ৭ জুলাই পর্যন্ত তিন জনকে জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন তিনি।

সিবিআই জানিয়েছে, এ দিনই ভুবনেশ্বরের নবদিগন্ত নামে একটি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৯ মে সারদা-তদন্তের ভার সিবিআই-কে দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্ট যে-৪৪টি অর্থ লগ্নি সংস্থার কথা জানিয়েছিল, এই সংস্থাটি তার অন্যতম বলেই জানায় সিবিআই। ওই সংস্থার ডিরেক্টরদের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং মানি সার্কুলেশন স্কিম নিরোধক আইনে মামলা করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement