কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।
দু’বার তলব এড়ানোর পরে তৃতীয় বারের ডাকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এ বার তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কেও ডেকে পাঠাল ইডি। ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবারেই চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে মেয়রের বেহালার বাড়িতে। ৪ সেপ্টেম্বর মেয়র-পত্নীকে সল্টলেকে ইডি-র অফিসে হাজির হতে বলা হয়েছে।
নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েলের স্টিং অপারেশনে রাজ্যের শাসক দলের যে-সব তাবড় নেতা টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁদের তালিকায় মেয়র ও মন্ত্রী শোভনবাবুর নাম আছে। তবে তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে তেমন কোনও অভিযোগ নেই। বরং শোভনবাবুর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে তাঁকে নাকাল করা হচ্ছে বলে তাঁর স্ত্রী নিউ মার্কেট থানায় নালিশ করেছিলেন। এ-হেন মেয়র-পত্নীকে তলব কেন?
আরও পড়ুন: প্রতারণার মামলা দ্রুত মেটাতে দাবি
ইডি সূত্রে আগেই জানানো হয়েছিল, নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত হিসেবে যাঁদের নাম উঠে আসছে, তাঁদের তো বটেই, তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যদেরও সম্পত্তির হিসেব খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ, যাঁদের নাম উঠে এসেছে, তাঁরা শুধু নারদ-প্রধান ম্যাথু নয়, অন্যদের কাছ থেকেও বিভিন্ন সময়ে এ ভাবে হিসেব-বহির্ভূত টাকা নিয়ে থাকতে পারেন। তদন্তকারীদের ধারণা, সেই টাকা সব সময়ে নিজের অ্যাকাউন্টে না-রেখে পরিবারের ঘনিষ্ঠদের অ্যাকাউন্টেও রাখা হতে পারে।
তা বলে বেছে বেছে মেয়রের স্ত্রীকেই ডাকা হচ্ছে কেন?
ইডি সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত নারদ কাণ্ডে অভিযুক্ত যে-ছ’জনকে জেরা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে নিলেও একমাত্র শোভনবাবুই নারদ-কর্ণধারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেননি। প্রথম ও দ্বিতীয় বারের তলবে তিনি হাজিরাও দেননি। শেষে ১০ অগস্ট সল্টলেকে ইডি দফতরে গিয়ে তদন্তকারীদের বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তরে মেয়র জানান, তাঁর টাকাপয়সার যাবতীয় হিসেবপত্রের কথা জানেন তাঁর স্ত্রী। এমনকী যে-চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট তাঁর সম্পত্তির হিসেবপত্র দেখেন, স্ত্রী তাঁর নামটিও জানেন।
তদন্তকারীদের কথায়, ‘‘সবই যদি মেয়রের স্ত্রী জানেন, তা হলে তাঁকে ডেকেই আমরা সব জেনে নেব।’’ এই নিয়ে মঙ্গলবার শোভনবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।’’ ইডি-র তলবি চিঠির ব্যাপারে মেয়র-পত্নীর বক্তব্য জানা যায়নি।
নারদ কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত অভিযুক্ত যে-ছ’জন ইডি দফতরে হাজিরা দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে শোভনবাবু ছাড়া রয়েছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও ফিরহাদ (ববি) হাকিম, সাংসদ সুলতান আহমেদ, বিধায়ক ও পুরসভার ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদ এবং আইপিএস এসএমএইচ মির্জা। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ম্যাথুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁরা সেই টাকা যাঁদের দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন, একে একে তাঁদেরও ডাকা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই কলকাতার এক নামী ফুটবল ক্লাবের কর্তাদের ডেকে তাঁদের হিসেবপত্র চাওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ডেকেও হিসেব চেয়েছে ইডি। মেয়রের স্ত্রী ছাড়াও সোমবার একটি নার্সিংহোমের কর্তা, একটি খেলার সরঞ্জামের দোকানের মালিক, একটি ক্লাবের প্রতিনিধি-সহ বেশ কয়েক জনের কাছে তলবি চিঠি পাঠিয়েছে তারা।