জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় আইনজীবী বদল করল ইডি। সোমবার ইডির হয়ে আদালতে সওয়াল করেন নতুন আইনজীবী। গত শুনানিতে রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে মামলায় ইডির আইনজীবী ছিলেন ফিরোজ় এডুলজি। এখন দাঁড়িয়েছেন আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী। তিনি কেন্দ্রের ডেপুটি সলিসিটর জেনারেলও। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী পরিবর্তনের মধ্যেও কোনও ‘রহস্য’ আছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। কারণ, সম্প্রতি কামদুনি গণধর্ষণ মামলায় আইনজীবী এডুলজির ‘অবস্থান’ ঘিরে বিতর্ক হয়।
স্কুল এবং পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক মামলায় ইডি-র হয়ে গত বছর থেকে আদালতে লড়াই করেছেন এডুলজি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, অয়ন শীল এবং কুন্তল ঘোষদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। গত মাসে মানিকের পুত্র সৌভিকের জামিনের তীব্র বিরোধিতা করেন ইডির ওই আইনজীবী। কলকাতা হাই কোর্টে খারিজ হয়ে যায় মানিক পুত্রের আবেদন। কয়েক মাস আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলার বিদেশযাত্রার বিরোধিতা করে হাই কোর্টে সওয়াল করেছিলেন এডুলজি। কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থার হয়ে তাঁকে একের পর এক মামলায় অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। এখন রেশন দুর্নীতি মামলায় গত শুনানিতে স্পেশাল আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ করা হয় এডুলজিকে। সোমবারের শুনানিতে তাতে ছেদ পড়ল। তাঁর জায়গায় আনা হয় আইনজীবী ত্রিবেদীকে। এর পিছনে ‘রহস্য’ থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
সম্প্রতি কামদুনি গণধর্ষণ মামলায় আইনজীবী এডুলজির ভূমিকা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে। ওই মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত আসামি আনসারি আলির হয়ে সওয়াল করেছিলেন তিনি। গত মাসে হাই কোর্ট শাস্তি কমিয়ে ওই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তৃণমূলের একাংশ। বিষয়টি নিয়ে গেরুয়া শিবির কিছুটা অস্বস্তিতেও পড়ে। অন্য দিকে, তৃণমূলের মন্ত্রীর হয়েও এডুলজিকে হাই কোর্টে লড়াই করতে দেখা গিয়েছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির বিরুদ্ধে কুমন্তব্যের অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় এডুলজি ছিলেন অখিলের আইনজীবী। তখন থেকেই বিজেপির ‘ব্যাড বুক’-এ তাঁর নাম।
সোমবার আইনজীবী বদল নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু জানায়নি ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সূত্রে খবর, এ বার থেকে জ্যোতিপ্রিয়ের বিরুদ্ধে মামলায় সওয়াল করতে দেখা যাবে না এডুলজিকে। মামলায় এর কোনও প্রভাব পড়বে কি না তা সময় বলবে। তবে অনেকে মনে করছেন, আইনজীবী হিসাবে এডুলজির পরিচিতি রয়েছে। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় তিনি সওয়াল করেছেন। হাঁসখালির ধর্ষণকাণ্ডে হাই কোর্টে লড়াই করে তিনি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ এনেছিলেন। এমতাবস্থায় জ্যোতিপ্রিয়ের বিরুদ্ধে তাঁকে মামলা থেকে সরানোর সিদ্ধান্তের গুরুত্ব রয়েছে।