নিয়োগ মামলায় ‘মিডলম্যান’ প্রসন্ন রায়দের ১৬৩ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগের মামলায় ‘মিডলম্যান’ প্রসন্ন রায়ের ১৬৩ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল ইডি। এই মামলায় আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করছে তারা। শনিবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, প্রসন্ন, তাঁর স্ত্রী কাজল সোনি রায়ের নামে থাকা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছে একাধিক হোটেল, রিসর্টও। বাজেয়াপ্ত করা মোট সম্পত্তির মূল্য ১৬৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা।
ইডি যে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে, তা মূলত প্রসন্ন এবং তাঁর স্ত্রীর নামে থাকলেও একটি সংস্থার ভাগও তাতে রয়েছে। শ্রী দুর্গা ডিলকম প্রাইভেট লিমিটেডের সম্পত্তিও বাজেয়াপ্তের তালিকায় রয়েছে। ইডি জানিয়েছে, ওই সংস্থাটি প্রসন্নই নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করতেন। এই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ফলে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি মামলায় ইডির বাজেয়াপ্ত করা মোট অর্থ এবং সম্পত্তির মূল্য দাঁড়াল ৫৪৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা।
এসএসসি দুর্নীতির মামলায় প্রসন্নকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। পরে এই মামলার আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে ইডি। বর্তমানে প্রসন্ন জেল হেফাজতে রয়েছেন। তদন্তে নেমে প্রসন্নের বিভিন্ন সংস্থায় ২৬ কোটি এক লক্ষ ৮৯ হাজার ৬৭২ টাকার খোঁজ পায় ইডি। প্রসন্নের দাবি, এই সম্পূর্ণ টাকা কৃষিকাজের সূত্রে তিনি আয় করেছেন। আখ, পেঁপে, কলা, ক্যাপসিকাম, টম্যাটো, বিন্স, সর্ষে, নারকেল রয়েছে সেই চাষের তালিকায়। তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিটেও সে কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। প্রসন্ন ইডিকে জানান, স্থানীয় চাষিদের মজুরির ভিত্তিতে জমিতে নিয়োগ করেছিলেন তিনি। রোজগার করা অর্থ নিজের বিভিন্ন সংস্থার অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন।
প্রসন্ন, তাঁর স্ত্রী এবং ঘনিষ্ঠদের মোট ২৫০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পাওয়া গিয়েছে। সেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির ফরেন্সিক অডিট করিয়েছিল সিবিআই। চার্জশিটে ইডির দাবি, অ্যাকাউন্টগুলিতে ৭২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ইডি আরও জানায়, প্রসন্নের স্ত্রীর আয়ের অন্য কোনও উৎস নেই। তাঁর অ্যাকাউন্টেও দু’কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। ইডির দাবি, প্রসন্নের জমিতে কোনও চাষবাস হয়নি। তদন্তকারীরা সংস্থার কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রসন্নের দাবির সপক্ষে তেমন কোনও নথি পাওয়া যায়নি। নিয়োগ দুর্নীতির টাকাই তিনি বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে রেখেছিলেন বলেই ইডির অনুমান। দুর্নীতির সেই উৎস আড়াল করতেই চাষবাসের এই উৎস দেখিয়েছিলেন। অবশেষে প্রসন্নদের ১৬৩ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল কেন্দ্রীয় সংস্থা।