পার্থ ও মানিক। —ফাইল চিত্র।
সময় চেয়েছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। ১০ মিনিটের জন্য কথা বলতে চেয়েছিলেন। সতীর্থ তৃণমূল বিধায়ককে সেই সময় কি দিয়েছিলেন পার্থ? এমন অনেক প্রশ্নই উঠেছে আদালতে পেশ করা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর চার্জশিটে। সেখানে মেসেজ বিনিময়ে কী কী লেখা হয়েছিল তা-ও তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে আদালতকে। মানিক ‘যা তা ভাবে’ টাকা তুলছেন বলে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় একটি মেসেজ পান বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রেরকের নাম উল্লেখ নেই।
শিক্ষক নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র তদন্তে ইডির হাতে ২৩ জুলাই গ্রেফতার হন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এখনও তিনি রয়েছেন সিবিআই হেফাজতে। অন্য দিকে, দুই কেন্দ্রীয় সংস্থারই আতশ কাচের তলায় রয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক। ইতিমধ্যেই তাঁকে জেরা করেছে ইডি। পার্থের বাড়িতে তল্লাশির সময়ে ইডি গিয়েছিল মানিকের বাড়িতেও। ‘লুক আউট নোটিস’ও জারি করা হয় বলে জানা যায়। এ বার পার্থ-মানিক মেসেজ চালাচালির কিছু নিদর্শনও আদালতে পেশ করল ইডি।
চার্জশিটে বলে হয়েছে, শিক্ষক দুর্নীতিতে মানিকের ভূমিকা নিয়ে পার্থকে জেরা করা হয়েছে। গ্রেফতারের সময়ে বাজেয়াপ্ত করা পার্থের মোবাইলে মানিকের নাম ‘মানিক ভট্টাচার্য ল’ বলে যে সেভ করা রয়েছে তা-ও জানিয়েছে ইডি। চার্জশিটে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মানিক একটি মেসেজ পাঠান। প্রাইমারি টেটের ইন্টারভিউয়ের ব্যাপারেই সেই মেসেজ বলে দাবি ইডির। মানিক লেখেন, ‘দশ মিনিট দিস কাল বাড়ি যাব’। জবাবে পার্থ ‘ওকে’ লেখেন। এর পর ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি পার্থকে আর একটি মেসেজে মানিক লেখেন, ‘ইন্টারভিউ স্টার্টেড অল ওভার দ্য স্টেট।’ কিছু ক্ষণের মধ্যেই জবাবে ‘টিকেএস’ লেখেন পার্থ। পার্থ কি ‘থ্যানক্স’ বলতে চেয়েছিলেন? ইডির দাবি, এই মেসেজ সম্পর্কে পার্থকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান হিসাবেই যোগাযোগ হয়েছিল। তাই তিনি ধন্যবাদ জানান।
চার্জশিটের অংশ।
তবে আরও একটি মেসেজের উল্লেখ রয়েছে চার্জশিটে। সেটির ক্ষেত্রে অবশ্য প্রেরকের নাম প্রকাশ করেনি ইডি। কী লেখা ছিল তাতে তা-ও উল্লেখ রয়েছে চার্জশিটে। জনৈক সেই ব্যক্তি পার্থকে লিখেছেন, ‘দাদা মানিক ভট্টাচার্য ইজ টেকিং মানি যা তা ভাবে। কোভিডের সময়ে প্রাইভেট কলেজগুলো থেকে ছাত্রপিছু ও ৫০০ টাকা করে নিয়েছে। ছাত্রেরা দিতে না পারলে কলেজকে ধমকি দিয়েছে, তাদের হয়রান করছে। নদিয়ায় টেটের ইন্টারভিউ শেষ হয়েছে। কিন্তু ও চেয়ারম্যানকে বলেছে, ফাঁকা সাইন করা ডকুমেন্ট মাস্টার শিট জমা দিতে। ইন্টারভিউর কোনও নম্বর লিখতে বারণ করছে। আবার ও টাকা নিয়ে করবে, আবার কেস হবে। আবার পার্টি খাস্তা হবে। প্লিজ এটা দেখুন। লাভ।’ এই মেসেজটি পার্থ ‘রি-ফরোয়ার্ড’ করেন বলে দাবি করেছে ইডি। সেটা কি মানিককেই? সে কথা খুব স্পষ্ট নয় চার্জশিটে।
ওই মেসেজ নিয়ে ইডির প্রশ্ন, কেন মাস্টার শিট ফাঁকা রাখতে বলেছিলেন? ইন্টারভিউর নম্বর বসাতে কেন বারণ করা হয়েছিল চেয়ারম্যানকে? এমন প্রশ্নের নাকি কোনও সুদত্তর দিতে পারেননি পার্থ। তদন্তকারীদের তিনি নাকি জানান, ওটা প্রাইমারি বোর্ডের বিষয়।