জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
তিনি ‘অসুস্থ’। তাই সশরীরে নয়, জেলবন্দি রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ওরফে বালুকে বৃহস্পতিবার জেল থেকে ভার্চুয়ালি পেশ করা হয়েছিল আদালতে। আর সেই ভিডিয়ো কনফারেন্সে রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মন্ত্রীর আবেদন, ‘‘আমাকে বাঁচতে দিন।’’
মন্ত্রীর গ্রেফতারের পরে দু’বার তাঁকে অবকাশকালীন বিচারকের কাছে পেশ করা হয়েছিল। এ দিন প্রথম তাঁকে এই মামলায় নির্দিষ্ট বিচার ভবনের সিবিআই (পিএমএলএ) বিশেষ আদালতে পেশ করা হয়।
সেখানে এ দিন লিখিত ভাবে ইডির দাবি, রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে ধৃত বাকিবুর রহমান ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মধ্যে দুর্নীতির কালো টাকার লেনদেনের সুনির্দিষ্ট তথ্য তাদের হাতে এসেছে। তদন্তকারী অফিসারের দাবি, বাকিবুর, তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েক জন এবং জ্যোতিপ্রিয়ের মোবাইলগুলি থেকে পাওয়া হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে একাধিক আর্থিক লেনদেনের হদিস মিলেছে। বছর, মাস ও তারিখ উল্লেখ করে এক বার ১২ লক্ষ এবং আর এক বার ৬৮ লক্ষ টাকা জ্যোতিপ্রিয়কে বাকিবুর এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরা দিয়েছেন বলেও ইডি জানিয়েছে। মন্ত্রীর স্ত্রী ও আত্মীয়ের উড়ানের টিকিটের খরচ যে বাকিবুর মিটিয়েছিলেন, তা-ও এ দিন আদালতে জানানো হয়েছে।
জেলে গিয়ে তাঁকে জেরার আবেদন এ দিন মঞ্জুর করেছেন বিচারক। মন্ত্রীকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশও দিয়েছেন। তবে জ্যোতিপ্রিয়ের আইনজীবীদের তরফে এ দিনও জামিনের আবেদন করা হয়নি। এ দিন শুনানির সময়ে জেলের ভিসি রুমে ছিলেন মন্ত্রী। আর বিশেষ আদালতে ছিলেন বিচারক শুভেন্দু সাহা। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনার কি বসে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে? অসুবিধা হলে আপনার সেলে চলে যেতে পারেন। আপনি তো নিজেকে আইনজীবী বলে দাবি করেছেন। সে ক্ষেত্রে আদালত এবং সংশোধনাগারের সমস্ত রুল এবং এক্তিয়ার আপনি জানেন বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।’’
প্রত্যুত্তরে মন্ত্রী বাঁচতে দেওয়ার কথা বলেন। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘আমি কলকাতা হাই কোর্টের বারের সদস্য। আমার হাই সুগার রয়েছে। প্রায় সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি। বাঁ হাত এবং পা নাড়াতে পারছি না। আমাকে বাঁচতে দিন স্যর। আমাকে কোনও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।’’
এ দিন প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের তরফে আদালতে একটি রিপোর্ট দিয়ে জানানো হয়েছে, জ্যোতিপ্রিয় অসুস্থ। তাই ভার্চুয়ালি পেশ করা হচ্ছে। তবে এমন অসুস্থ নন, যে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। তবে জ্যোতিপ্রিয়ের পর্যাপ্ত চিকিৎসা এবং তাঁর সেলে একটি খাট ও চেয়ারের ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন করেন তাঁর আইনজীবীরা।
মন্ত্রীকে জেলে গিয়ে জেরা করার আবেদন এ দিন ইডির তরফে করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থার আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদী বলেন, ‘‘তল্লাশির সময়ে জ্যোতিপ্রিয়, তাঁর স্ত্রী মণিদীপা এবং মেয়ে প্রিয়দর্শিনীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে স্ত্রী ও মেয়ের বয়ানের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়ের বয়ান মেলেনি। এ ছাড়াও সাম্প্রতিক পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেও জ্যোতিপ্রিয়কে জেরার প্রয়োজন রয়েছে।’’ বিচারকের পর্যবেক্ষণ, তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী মামলা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। তাই বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম-সহ সংশোধনাগারে গিয়ে মন্ত্রীকে জেরার আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।
তবে নির্দেশিকায় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে মন্ত্রীর চিকিৎসা ও সেলে খাট ও চেয়ারের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি বিচারক। জ্যোতিপ্রিয়ের আইনজীবী অনিন্দ্য কিশোর রাউতের দাবি, ‘‘কমান্ড (সেনা) হাসপাতালের রিপোর্ট অনুযায়ী মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। কিন্তু তিনি ডায়াবিটিসে আক্রান্ত। যখন-তখন শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে। সেই কারণে তাঁর পর্যাপ্ত চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।’’