ইডি জানায়, দুর্নীতিতে জড়িতদের খুঁজে বার করাই তাদের মূল লক্ষ্য। ফাইল চিত্র।
বিভিন্ন অভিযুক্ত থেকে শুরু করে রাজ্যের শাসক দলের তরফে বারংবার অভিযোগ করা হচ্ছে যে, সিবিআই, ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে প্রায়শই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় বিচার ভবনে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে দাঁড়িয়ে ইডি দাবি করল, তাদের কোনও রাজনৈতিক রং নেই। দুর্নীতিতে জড়িতদের খুঁজে বার করাই তাদের মূল লক্ষ্য। রীতিমতো গীতা উদ্ধৃত করে ইডি-র তরফে জানানো হল, ফলের আশায় না-থেকেই তারা অর্থ পাচারের মতো দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে।
রাজ্যের শাসক দলের বহিষ্কৃত যুব নেতা কুন্তল ঘোষের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে ইডি-র আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি ও অভিজিৎ ভদ্র এ দিন এই দাবি করেছেন। সম্প্রতি কুন্তল অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘ইডি শাসক দলের মুখপাত্রের মতো কথা বলছে।’’ এ দিনেই নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় আলিপুরে ফের বিচারকের প্রশ্নের মুখে পড়েছে সিবিআই। ‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির মামলার তদন্তকারী অফিসারকে তিনি বলেন, ‘‘এই মামলায় চার্জশিটে অনেক অভিযুক্তের নাম আছে। কিন্তু মাত্র এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।’’
বিচার ভবনে শুনানির সময়ে ভগবদ্গীতার কয়েকটি শ্লোকের উল্লেখ করে ইডি-র আইনজীবীরা বলেন, ‘‘আপনার কর্মের উপরে আপনার অধিকার আছে। কিন্তু কর্মফলের উপরে কোনও অধিকার নেই। আমরা শুধু বেআইনি অর্থপাচারে জড়িতদের ধরি। এ ছাড়া আমাদের কোনও উদ্দেশ্য নেই।’’ ইডি-র আইনজীবীরা ১৯ জুন পর্যন্ত কুন্তলকে জেল হেফাজতে রাখার আবেদন করেন। সেই আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক। ইডি-র কৌঁসুলিদের বক্তব্য, ওই দিন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন অভিযুক্তের জামিনের আর্জির শুনানি আছে। সে-দিন কুন্তলেরও জামিনের মামলার শুনানি হলে সুবিধা হয়।
কুন্তলের আইনজীবী বলেন, ‘‘সিবিআই জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, অথচ আমাদের জানাচ্ছে না। সম্প্রতি এক দিন বিকেল ৪টে ৫ মিনিটে জেলে গিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু আমাদের তা জানানো হয়েছে মাত্র ন’মিনিট আগে।’’ বিচারক তখন কুন্তলের বক্তব্য জানতে চান। তিনিও বলেন, ‘‘সিবিআই ঠিক সময়ে আইনজীবীদের কিছুই জানাচ্ছে না।’’
সাধারণত আদালতে প্রবেশ-প্রস্থানের সময় কুন্তল অনেক কথা বলেন। এ দিন আদালতে ঢোকার মুখে অবশ্য তিনি কার্যত নীরব ছিলেন। বেরোনোর সময় তাঁকে বলতে শোনা যায়, তাঁর স্ত্রীকে ফাঁসানো হবে বলে কেন্দ্রীয় সংস্থা তাঁকে হুমকি দিয়েছে।
আলিপুরে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় শান্তিপ্রসাদ সিংহ, সুবীরেশ ভট্টাচার্য-সহ আট জনকে বিশেষ সিবিআই আদালতে পেশ করা হলে একাধিক বার কেস ডায়েরি পর্যবেক্ষণ করে ক্ষুব্ধ বিচারক বলেন, ‘‘‘গ্রুপ সি’ (তৃতীয় শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ) ছাড়া আর কোনও মামলায় তেমন গতি নেই।’’ সম্প্রতি গ্রুপ সি মামলার তদন্তকারী অফিসার মলয় দাসের নামোল্লেখ করে বিচারক সিবিআইয়ের কৌঁসুলিকে বলেছিলেন, ‘‘মলয়বাবুর মতো অন্য অফিসারদের মামলায় গতি আনতে বলুন।’’ শান্তিপ্রসাদের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত এ দিন বলেন, ‘‘সিবিআই একের পর এক চার্জশিট জমা দিচ্ছে আর বলছে, তদন্ত এখনও চলছে। দু’টি বিষয় একসঙ্গে কী ভাবে সম্ভব?’’ আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী বলেন, ‘‘এফআইআরে নাম না-থাকলেও এবং তদন্তে সহযোগিতা করলেও জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করা হচ্ছে।’’
আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘প্রসন্ন রায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কয়েকটি স্বাক্ষরের প্রয়োজন ছিল। আদালতের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন।’’ বিচারক আট অভিযুক্তকেই ১১ই মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে আদালত সূত্রের খবর।