মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় হানা সিবিআই আধিকারিকদের)। —ফাইল চিত্র।
পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে বুধবার সকাল থেকেই রাজ্যের বেশ কয়েকটি পুরসভায় হানা দিয়েছে সিবিআই। সিবিআই আধিকারিকেরা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে রাজ্যের একাধিক পুরসভায় পৌঁছন। তার আগে সল্টলেকে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরেও যায় সিবিআইয়ের একটি দল। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর, পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত নথি খতিয়ে দেখার জন্যই তাদের এই অভিযান। বুধবার দমদম, দক্ষিণ দমদম, হালিশহর, বরাহনগর, টিটাগড়, পানিহাটি, কামারহাটি, কাঁচরাপাড়া, নব ব্যারাকপুর, টাকি পুরসভায় হানা দেন ইডি আধিকারিকেরা। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পুরসভাগুলিতে নিয়োগে কোনও দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুরসভা এবং পুর দফতরে সিবিআই হানা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে না জেনে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, “পুরোটাই রাজনীতি চলছে।”
গত ১৯ মার্চ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অয়নকে গ্রেফতার করেছিল আর এক তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ইডির তরফে দাবি করা হয়, তাঁর সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে রাজ্যের একাধিক পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরিপ্রার্থীদের ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা যায়, ‘এবিএস ইনফোজোন’ নামে অয়নের সংস্থা একাধিক পুরসভায় নিয়োগ হয়েছে। ইডি সূত্রে এ-ও জানা যায়, জেরায় অয়ন তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে, বিভিন্ন পুরসভায় চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তিনি মোট ২০০ কোটি টাকা তুলেছিলেন। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রেই জানা যায়, পুরসভায় সাফাইকর্মী, অ্যাম্বুল্যান্স চালক, পিওন, পাম্পচালক প্রভৃতি পদের জন্য বিভিন্ন দর রাখতেন অয়ন। ৪ থেকে ৭ লক্ষ টাকায় সেই সব চাকরি ‘বিক্রি’ হত। বুধবার ইডি আধিকারিকেরা নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হওয়া অয়নের হুগলির ফ্ল্যাটেও গিয়েছিলেন। সকাল ১১টা নাগাদ চুঁচুড়ার জগুদাসপাড়ায় অয়নের ফ্ল্যাটে ঢোকেন তাঁরা। প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা পরে অয়নের ফ্ল্যাট থেকে বেরোন তদন্তকারীরা।
অয়নের সংস্থা ‘এবিএস ইনফোজোন’ পুরসভার নিয়োগে ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) মূল্যায়নের দায়িত্বে ছিল। ইডি সূত্রের খবর, এই সংস্থার ডিরেক্টর হিসাবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে ওএমআর-এ একাধিক চাকরিপ্রার্থীর নম্বর বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অয়ন। আবার কারও কারও নম্বর কমানোও হয়েছিল। গত মার্চ মাসে অয়নের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে রাজ্যের একাধিক পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরিপ্রার্থীদের ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) পাওয়া গিয়েছিল বলে জানিয়েছিল ইডি। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, ওএমআর শিট খতিয়ে দেখে যে সব পুরসভার নিয়োগে অনিয়মের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, সেই পুরসভাগুলিতেই বুধবার তল্লাশি চালানো হয়।
বিষয়টি কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে উঠলে তিনি পুরসভায় দুর্নীতির মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে এই মামলার এজলাস বদল হলেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ই বহাল রাখে হাই কোর্ট। সিবিআই-রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য। এর আগে, হাই কোর্টের ২টি ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল প্রধান বিচারপতির কাছে। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহরায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এবং বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি ফিরিয়ে দিয়েছিল। হাই কোর্ট জানিয়েছিল, মামলাটি এই ২ বেঞ্চের বিচার্য বিষয়ের তালিকায় নেই। তাই এই মামলার শুনানি সম্ভব নয়। ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলাটি ছেড়ে দেওয়ায় তা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে মামলা পাঠান প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। চলতি সপ্তাহে মামলাটির শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।