সূচনা: বেঙ্গল বিজনেস কনক্লেভের অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দিঘায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
বুধবার, বেঙ্গল বিজনেস কনক্লেভের প্রথম দিনে তাজপুর সমুদ্র বন্দরের সাইট অফিস উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় হিমঘর থেকে এই প্রকল্প বের করে এনে রাজ্য সরকার বিনিয়োগকারীদের বার্তা দিল, শিল্পে লগ্নি টানতে প্রস্তুত পশ্চিমবঙ্গ। এর আগে রাজ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কেন্দ্রের হাত ছেড়ে নিজেরাই বন্দর তৈরি করবে। তার পর একাধিক সংস্থা আগ্রহ দেখালেও পরে পিছিয়ে যায়। এখন কোন কোন সংস্থা বন্দর নির্মাণে শরিক হতে চায়, তা অবশ্য এ দিন স্পষ্ট করেনি রাজ্য।
গোটা দেশে মন্দার পরিস্থিতির মাঝেই এ রাজ্য কী ভাবে এগিয়ে চলেছে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘শিল্প আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল। এখন দেশের অন্ধকার (ডুম অ্যান্ড গ্লুম) আর্থিক পরিস্থিতিতে জিডিপি তলানিতে।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে যেখানে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৮.৮৭ শতাংশ ছিল, সেখানে ২০১৯-২০ দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে তা হয়েছে ৪.৫৫ শতাংশ। ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে যেখানে শিল্প বৃদ্ধির হার ছিল ৯.৫৮ শতাংশ, সেখানে ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে তা হয়েছে ৬.৮৬ শতাংশ। উৎপাদন ক্ষেত্রেও বৃদ্ধি ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে ১৩.০৬ শতাংশ থেকে কমে ২০১৮-১৯ সালে হয়েছে ৬.৯৪ শতাংশ। শিল্পোৎপাদনের হার ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ৪.৬৩ শতাংশ। ২০১৯ সালের একই সময়ে তা হয়েছে মাইনাস ৪.২৭ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগও ২০১৭-১৮ সালের ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ২০১৮-১৯ সালে হয়েছে মাত্র ১ শতাংশ। গত ৪৫ বছরে বেকারত্বের হারও সর্বাধিক।
মমতার কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের হার আমরা গোটা দেশের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমাতে পেরেছি। আমাদের শিল্পোৎপাদনের হার দেশের হারের দ্বিগুণ। গোটা দেশের মধ্যে সর্বাধিক ৬ শতাংশ হারে গরিবি কমেছে। পরিকল্পনা, সামাজিক, পরিকাঠামো—সব ক্ষেত্রেই আমাদের বরাদ্দ অনেক গুণ বেড়েছে। ইজ় অব ডুইং বিজনেসে আমরা দেশের মধ্যে প্রথম।’’
এ দিন প্রায় ২০টি দেশের প্রতিনিধি যোগ দেন শিল্প সম্মেলনে। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, প্রথম দিনে প্রায় ছ’হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।
অন্ডাল বিমানবন্দরের অন্যতম শরিক চাঙ্গি বিমানবন্দরের কর্তা জানান, অন্ডাল বিমানবন্দরে উড়ান বাড়ছে। পর্যটন শিল্পের উপরে বিশেষ জোর দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, দিঘায় একটি পাঁচতারা এবং চারতারা হোটেল শীঘ্রই চালু হবে। টিটাগড় ওয়াগন ফ্যাক্টরির সিএমডি উমেশ চৌধুরী জানান, মেট্রোর অ্যালুমিনিয়াম কোচ তৈরি করবে তাঁদের সংস্থা। বড় জাহাজ নির্মাণের জন্য রাজ্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছিলেন তিনি। অর্থমন্ত্রী শালিমারে সেই সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দেন তাঁকে।
এ দিন ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর সঙ্গে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম এবং বণিকসভা ফিকির সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। ডাচ কনসোর্শিয়াম এবং কলকাতা লেদার কমপ্লেক্সের ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে মউ স্বাক্ষর হয়েছে। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সঙ্গে জার্মানির একটি সংস্থা মউ স্বাক্ষর করেছে। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমকে আশ্বাসপত্র (লেটার অব ইনটেন্ট) দিয়েছে ইউনাইটেড কিংডম ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (ইউকেডিআইটি)।
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আগামী বছর শিল্প সম্মেলন হবে ১৫ এবং ১৬ ডিসেম্বর।