—ফাইল চিত্র।
করোনা পরিস্থিতির একটু উন্নতি দেখা দেওয়ার পরে রাজ্যসভা ও বিধানসভার উপনির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হল। রাজ্যসভায় দীনেশ ত্রিবেদীর শূন্য আসনে ৯ অগস্ট ভোট হবে বলে ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। অন্য দিকে, বিধানসভার যে ৭টি আসনে ভোট বকেয়া আছে, সেখানে ইভিএম যাচাই-প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের (সিইও) দফতর। সাধারণ ভাবে ৬ মাসের সময়সীমা মানলে বিধানসভার উপনির্বাচনের প্রক্রিয়া নভেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার কথা।
রাজ্যসভায় এখন এ রাজ্য থেকে খালি হয়েছে দু’টি আসন। তৃণমূলের সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়ে দীনেশ যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। আর বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়ে জয়ের পরে রাজ্যসভার আসন ছেড়ে দিয়েছেন তৃণমূলের আর এক সাংসদ মানস ভুঁইয়া। ভাঙা মেয়াদের জন্য দু’টি আসনেই উপনির্বাচন করতে হবে। ভোট যখন হচ্ছেই, তখন একটি আসনের জন্য নির্বাচনী নির্ঘণ্ট কেন ঘোষণা হল— সেই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। তাদের যুক্তি, করোনা আবহে একসঙ্গে দুই আসনের নির্বাচন সেরে নিলে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।
নির্বাচন কমিশনের যুক্তি, দীনেশ গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভার পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। নিয়মমতো ৬ মাস অর্থাৎ অগস্টের মধ্যে ওই নির্বাচন সেরে ফেলতে হবে কমিশনকে। তাই আগামী ৯ অগস্ট নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়েছে। অন্য দিকে, মানসবাবু রাজ্যসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বিধানসভা ভোটের পরে, গত ৬ মে। ওই আসনে নির্বাচন করানোর জন্য নভেম্বর পর্যন্ত সময় রয়েছে। তাই আপাতত একটি আসনেই ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।
এ রাজ্যে বিধানসভার দু’টি আসনে স্থগিত হয়ে থাকা ভোট এবং পাঁচটি আসনের উপনির্বাচন দ্রুত করানোর দাবিতে বৃহস্পতিবারই দিল্লিতে কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। ঘটনাচক্রে, তার পরের দিনই ওই কেন্দ্রগুলির জন্য ইভিএম পরীক্ষা করা সংক্রান্ত নির্দেশ পাঠানো হয়েছে জেলাশাসকদের কাছে। কমিশন সূত্রের ব্যাখ্যা, নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচনের নির্ধারিত সময়ের দু-তিন মাস আগে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলির ভোটযন্ত্র ঠিক মতো কাজ করছে কি না, তার পরীক্ষা করা হয়। পরিভাষায় তাকে বলে ‘ফার্স্ট লেভেল চেকিং’ বা এফএলসি। তার পরে নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলে পরবর্তী ধাপে ভোটযন্ত্র-ব্যবস্থাপনার বাকি কাজ ধাপে ধাপে করা হয়। ভোটের দিন রাজনৈতিক দলগুলির এজেন্টদের সামনে ভোটযন্ত্রের পরীক্ষা করে মূল ভোটদান পর্ব শুরু করা হয়।
নিয়ম মানলে রাজ্যে ৭টি কেন্দ্রে ভোট হওয়ার কথা নভেম্বরের মধ্যে। হিসেবমতো তার অন্তত এক মাস আগে ভোট ঘোষণা হওয়ার কথা। এ মাসে ইভিএম-এর প্রথম পর্যায়ের যাচাই শুরু হলে মাঝে দু’মাস (অগস্ট এবং সেপ্টেম্বর) পুরোপুরি ব্যবধান থাকছে। সেই কারণে বকেয়া ভোট ও উপনির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আরও জোরদার হল বলেই পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।
কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘যে কেন্দ্রগুলিতে ভোট বাকি রয়েছে, সেই এলাকাগুলিতে কয়েক দিনের মধ্যেই ইভিএম-এর এফএলসি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভোট ঘোষণা কবে হবে, তা এখনই বলার সময় আসেনি। তবে প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।”
চুঁচুড়ায় এ দিন বিজেপির জেলা কার্যালয়ে বৈঠক করতে এসে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘যারা শতাধিক পুরসভার ভোট করাতে পারে না, সার্কুলার অনুযায়ী লোকাল ট্রেন চালাতে পারে না, তারা উপনির্বাচনের জন্য কী করে ব্যস্ত হয়ে পড়ে?’’ তৃণমূল নেতা তাপস রায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘রাজ্যসভা বা বিধানসভা উপনির্বাচন নিয়ে এখন সক্রিয়তা দেখিয়েছে তো কমিশন! কবে কোথায় ভোট হবে বা হবে না, সেটা কি বিজেপি ঠিক করে দেবে?’’