—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
লোকসভা ভোট মিটতেই রাজ্যে ফের নির্বাচন। চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের দিনক্ষণ জানিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন। এই চারটি কেন্দ্র হল, নদিয়ার রানাঘাট দক্ষিণ, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা, কলকাতার মানিকতলা এবং উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ। আগামী ১০ জুলাই এই চার কেন্দ্রেই উপনির্বাচন হবে। ভোটগণনা হবে ১৩ জুলাই।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। এ বার লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে রায়গঞ্জ কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল রাজ্যের শাসকদল। ফলে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিতে হয় কল্যাণীকে। তিনি ইস্তফা দেওয়ায় রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। একই ভাবে ২০২১ সালে রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে জয়ী হয়ে লোকসভা ভোটের ঠিক আগে তৃণমূলে যোগ দেন মুকুটমণি অধিকারী। তাঁকে এ বার রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। মুকুটমণিও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বাগদা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন বিশ্বজিৎ দাস। তাঁকে এ বার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করে জোড়াফুল শিবির। বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। গত বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতার মানিকতলা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা, অধুনা প্রয়াত সাধন পাণ্ডে। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সাধন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মারা যান। কিন্তু তার পর দীর্ঘ দিন মানিকতলা বিধায়কহীন থাকলেও সেখানে উপনির্বাচন হয়নি। কারণ, গত বিধানসভায় এই কেন্দ্রের পরাজিত বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে কলকাতা হাই কোর্টে ‘ইলেকশন পিটিশন’ দাখিল করেছিলেন।
হাই কোর্টে কল্যাণ অভিযোগ করেছিলেন, তৃণমূল প্রার্থী সাধন তৎকালীন ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে বিধানসভার ভোটারদের ৫০০ টাকা করে দিয়ে ভোট কিনেছিলেন। পাশাপাশি, কলকাতা পুরসভায় তৃণমূল ক্ষমতায় থাকার সুবাদে জল এবং বিদ্যুতের লাইন কাটার ভয় দেখানো হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। তার পর থেকে প্রায় দু’বছর ধরে হাই কোর্টে মামলাটি চলে। কল্যাণের অনীহার কারণে হাই কোর্টে ওই মামলার শুনানি বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে— এই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। শীর্ষ আদালত কল্যাণকে ভর্ৎসনা করে। শীর্ষ আদালতের ওই ভর্ৎসনার পরে গত ২৯ এপ্রিল হাই কোর্টে মামলা প্রত্যাহার করার কথা জানান কল্যাণ। আইনি জটিলতা কেটে যাওয়ায় এ বার মানিকতলায় উপনির্বাচন হতে চলেছে।
এ বার রাজ্যের বেশ কয়েক জন বিধায়ক লোকসভা ভোটে লড়ে জয়ী হয়েছেন। মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়ক জুন মালিয়া মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন। সিতাইয়ের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া কোচবিহার কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন। মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন। এর পাশাপাশি তালড্যাংরা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন। হাড়োয়া কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম বসিরহাট কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন। নৈহাটি কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন। এক মাত্র অরূপ গত সপ্তাহে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। নির্বাচিত সাংসদদের প্রত্যেকেই বিধায়ক পদে ইস্তফা দিলে উপরিউক্ত বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতেও উপনির্বাচন হবে। কমিশন সূত্রে খবর, এই ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রে পুজোর আগে উপনির্বাচন হতে পারে।
কমিশন জানিয়েছে, উপনির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ২১ জুন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৬ জুন। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও দেশের আরও ছ’টি রাজ্যের ন’টি কেন্দ্রে আগামী ১০ জুলাই উপনির্বাচন হবে। ভোট হবে বিহার, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাবের একটি করে কেন্দ্রে। হিমাচল প্রদেশের তিনটি এবং উত্তরাখণ্ডের দু’টি কেন্দ্রেই এই দিনক্ষণ অনুযায়ী উপনির্বাচন হবে।