ছবি: সংগৃহীত
ভোট পর্বে ইতিউতি সভা। গাড়ির বহরকে সঙ্গী করে রংবেরঙের প্রচার। দলের তারকা নেতানেত্রীদের মধ্যেই প্রার্থীদের প্রচার সীমাবদ্ধ নয়। থাকেন সেলুলয়েডের তারকারাও। তার সঙ্গে ফ্লেক্স বা দেওয়াল লিখনে একে অন্যকে টেক্কা দেওয়ার তাগিদ। এ সব দেখে ভোটের আঁচ পায় জনতা। এ বার কোভিড পর্বে এ সবের সঙ্গে যুক্ত হবে ভার্চুয়াল প্রচারও। তাই প্রার্থীদের নির্বাচনী খরচের ঊর্ধ্বসীমা বাড়াতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। ১০ নাকি ১৫ শতাংশ কতটা বাড়ানো হবে, তা নিয়ে চর্চা চলছে দেশের নির্বাচন পরিচালক সংস্থার মধ্যে। এ নিয়ে আইন মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলছে কমিশন। আইন মন্ত্রক এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া, সিকিম, আর ছ’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (এই সব জায়গায় লোকসভা নির্বাচনে খরচের ঊর্ধ্বসীমা ৫৪ লক্ষ টাকা) বাদে বাকি রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্র পিছু সর্বোচ্চ ৭০ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারেন প্রার্থীরা। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হলেও দিল্লিতে ৭০ লক্ষ টাকা ভোটের জন্য ব্যয় করতে পারেন তাঁরা। তেমনই নির্দেশ কমিশনের। বিধানসভা ভোটে অরুণাচল, গোয়া, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা, আর পুদুচেরি বাদে (এই সব জায়গায় কমিশনের নিয়মানুসারে কেন্দ্র পিছু ২০ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারেন প্রার্থী) অন্য রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কেন্দ্র পিছু ২৮ লক্ষ টাকা খরচ করতে পারেন প্রার্থী।
অতিমারির প্রেক্ষাপটে ভোট হওয়ার কথা বিহার বিধানসভার। সঙ্গে একটি লোকসভা এবং ৬৪টি বিধানসভার উপনির্বাচন হওয়ার কথা জানিয়েছে কমিশন। এই সব নির্বাচনে প্রচারের ক্ষেত্রে বাড়তি জমায়েত যেমন করা যাবে না, তেমনই সভা-সমিতি-মিছিলের আয়োজনে কী ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, তা-ও স্থির করেছে তারা। ফলে করোনা আবহে প্রচারের ভার্চুয়াল ক্ষেত্রকেও প্রাধান্য দিতে হবে প্রার্থীদের।
সাধারণ ভাবে, ভোটে প্রার্থীর খরচের মধ্যে পড়ে তাঁর সমর্থনে প্রচারের জন্য ব্যবহার হওয়া গাড়ি, সভা-সমিতি আয়োজন, প্রচারে ব্যবহৃত সামগ্রী, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন। বর্তমান সময়ের চাহিদা মেনে সমাজমাধ্যমও প্রচারের বড় ময়দান হয়ে উঠছে। তাই সেখানের প্রচারেও খরচ করতে হচ্ছে প্রার্থীকে। তার হিসেব ধরা হবে প্রার্থীর খরচের মধ্যে। তাই প্রার্থীর খরচের সীমা ১০-১৫% বাড়াতে চায় কমিশন। আর এই সীমা শুধু কোভিড-১৯ পর্বে হওয়া ভোটে নাকি স্থায়ী ভাবে বাড়ানো হবে, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া করছেন নির্বাচন সদনের কর্তারা।
সাধারণ ভাবে, কমিশন নির্ধারিত আর্থিক অঙ্কেই সীমাবদ্ধ থাকে প্রার্থীর খরচের হিসেব। অনেকের মতে, কমিশনের বেঁধে দেওয়া খরচের সীমা খাতা-কলমে দেখান প্রায় সব প্রার্থীই। কিন্তু বাস্তবে লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে ৭০ লক্ষের অনেক বেশিই খরচ করেন তাঁরা। অনেক ক্ষেত্রে দলের হিসেবের মধ্যে দেখানো হয় প্রার্থীর খরচকে। কারণ, এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের প্রচারের খরচ সীমা বাঁধার মতো সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন। যা জরুরি বলে মনে করেন অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক। তাঁদের মতে, প্রার্থীদের মতো রাজনৈতিক দলগুলির ভোট-খরচের সীমা বাঁধা হলে ‘টাকা ছড়িয়ে’ ভোটে জেতার অভিযোগেও অনেকটা লাগাম পড়বে। যদিও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি, ‘টাকা ছড়িয়ে’ ভোটে জেতার তত্ত্বের সমর্থনে তেমন জোরাল প্রমাণ মেলেনি।