—ফাইল চিত্র।
রাজ্য জুড়ে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা চলছে। সেই ধান ভাঙাতে খাদ্য দফতরের সঙ্গে চালকল মালিকদের চুক্তির ক্ষেত্রে অন্য জেলার তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর। রেশন দুর্নীতি নিয়ে হইচইয়ের আবহে পাশের পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ বেশ কয়েকটি জেলার চালকল মালিকেরা যেখানে চুক্তিতে আগ্রহই দেখাচ্ছেন না, সেখানে
কেন উল্টো ছবি নন্দীগ্রামের জেলায়? কারণ খুঁজতে গিয়ে সামনে আসছে অধিকারীদের
পালাবদলের তত্ত্ব।
গত বছর সরকারের কেনা ধান ভাঙাতে খাদ্য দফতরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ করেছিল রাজ্যের মোট ৫৭৮টি চালকল। কিন্তু এ বছর এখনও পর্যন্ত মাত্র ১৬৬টি চালকলের সঙ্গে চুক্তি করতে পেরেছে খাদ্য দফতর। জল্পনা, ইডির হাতে চালকল ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান এবং প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার জেরেই এমন পরিস্থিতি। দুই দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদের মতো কয়েকটি জেলায় যেমন এখনও হয় কোনও চালকল চুক্তিই করেনি, অথবা সংখ্যাটা খুবই কম।
উল্টো ছবি পূর্ব মেদিনীপুরে। জেলার যে ২৩টি চালকল গতবার এই চুক্তি করেছিল, তার মধ্যে ২১টিই চলতি বছরেও চুক্তি করেছে। এই চুক্তির নিরিখে প্রথমে রয়েছে হুগলি। সেখানে ৮৩টির মধ্যে ৭৬টি চালকল চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তার পরেই পূর্ব মেদিনীপুর। জেলা খাদ্য নিয়ামক দেবোপমা পাল বলছেন, ‘‘গত বছরগুলিতে যারা সরকারি নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট সময়ে চাল সরবরাহ করতে পেরেছিল, ফের তাদের বরাত দেওয়া হয়েছে।’’
যদিও, ২০২১ সালের আগে রাজ্যের তালিকাভুক্ত চাল ও আটাকল এই জেলায় অনেকটাই বেশি ছিল। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায়। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে এই জেলায় দাপট ছিল কাঁথির অধিকারী পরিবারের। সূত্রের দাবি, সেই সময় জেলায় কোন চাল ও আটাকল সরকারি তালিকাভুক্ত হবে, তা নির্ধারণেও নাকি থাকত শান্তিকুঞ্জের অঙ্গুলিহেলন। শুভেন্দু অধিকারী ২০২০ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে ছবিটা বদলায়। এখন কার্যত রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়েই এ সব সরকারি প্রক্রিয়া চলছে। সরকারি নিয়ম মেনে পোর্টাল অনুযায়ী তালিকাভুক্ত হচ্ছে জেলার চাল এবং আটাকলগুলি। যাদের উপযুক্ত
পরিকাঠামো রয়েছে, তাদেরই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
রাজনীতির বৃত্তে এই পরিবর্তনের কথা মেনেই পটাশপুরের বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিকের দাবি, ‘‘২০২০ সাল পর্যন্ত জেলায় সব সরকারি দফতর এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। যাদের পরিকাঠামো নেই, তেমন চালকলও তাঁর হাত ধরে সরকারি তালিকাভুক্ত হয়েছিল। পরে কিছু জনকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।’’ তৃণমূল পরিচালিত কাঁথি-১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন এক কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তাঁর আটাকল বন্ধই রয়েছে।
যদিও বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক, তথা বিরোধী দলনেতার ভাই সৌমেন্দু অধিকারী বলছেন, ‘‘অবাস্তব অভিযোগ। কোনও দিনই শুধুমাত্র আমাদের পরিবারের উপর ভিত্তি করে পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূল পরিচালিত হয়নি। নিজেরা যখন দুর্নীতিতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত, তখন অন্যদের জড়ানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল।’’