ফাইল চিত্র।
তিন বছর আগেও ভেঙেছিল দুর্গাপুর ব্যারাজের গেট। সে সময় প্রায় দু’দিন শহরে চলেছিল জলের সঙ্কট, কালোবাজারি, হাহাকার। উৎপাদন বন্ধ ছিল অনেক কারখানার। শনিবার ব্যারাজের ৩১ নম্বর গেট ভাঙার পরে, দুর্গাপুর পুরসভার দাবি, এ বার পরিস্থিতি ‘ততটা’ খারাপ হবে না। কারণ, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছে তারা। যদিও শহরবাসী বলছেন, ‘‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই।’’
পুরসভার মেয়র পারিষদ (জল সরবরাহ) পবিত্র চট্টোপাধ্যায় জানান, পানীয় জলের বিকল্প উৎস নিশ্চিত করতে ২০১৮-য় ২৫টি জায়গায় গভীর নলকূপ বসানো হয়। এ বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদেরও। পবিত্রবাবু বলেন, ‘‘পুরসভার হাতে ২৮টি জলের ট্যাঙ্কার রয়েছে। প্রয়োজনে আরও দশটি ট্যাঙ্কারের ব্যবস্থা করা হবে। সাব-মার্সিবল পাম্পে জল তুলে ট্যাঙ্কারে সরবরাহ করা হবে পাড়ায়-পাড়ায়।’’ এ ছাড়া, প্রয়োজনে আসানসোল থেকে জল আনার বিকল্পও রয়েছে। দুর্গাপুরের মেয়র দিলীপ অগস্তি বলেন, ‘‘রান্নার জল, খাবার জল হয়তো হবে। গাড়ি ধোয়া, বাগানে দেওয়ার জল পাবেন না। জল অপচয় না করার আর্জি জানানো হচ্ছে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন ৩৫টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকায় দু’বেলা পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। এ দিন গেট ভাঙার পরে, তা এক বেলা করা হয়েছে। ব্যারাজ ফাঁকা হওয়ার আগে জল তুলে রাখা হয়েছে। আজ, রবিবার সকালে তা সরবরাহ করা হবে। পরে ট্যাঙ্কারে করে জল দেওয়া হবে।
শহরের ডিএসপি টাউনশিপে (আটটি ওয়ার্ডে) জল দেয় দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট (ডিএসপি)। কারখানার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায় বলেন, ‘‘রবিবার বিকেলের আগে পানীয় জলের সমস্যা হবে না। প্রয়োজনে ট্যাঙ্কার ভাড়া করে জল দেওয়া হবে।’’
শহরবাসী অবশ্য চিন্তায় রয়েছেন। সিটি সেন্টারের বাসিন্দা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়, ৫৪ ফুট এলাকার মিহির রায়, ডিএসপি টাউনশিপের রণজিৎ গুহদের কথায়, ‘‘গত বার খাবার জল পেতে মাথা খুঁড়তে হয়েছিল। অনেকে বেশি দামে জল বেচেছিল। উপায় না দেখে তা-ই কিনেছিলাম। এ বার যতক্ষণ না জল আসছে, ততক্ষণ ভরসা পাচ্ছি না।’’
দুর্গাপুরের শিল্পাঞ্চলে কারখানায় জলের জোগানের কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগে শিল্পোদ্যোগীরা। ‘পশ্চিমবঙ্গ স্পঞ্জ আয়রন ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি শঙ্করলাল আগরওয়ালের প্রতিক্রিয়া, ‘‘জলের সমস্যা হবেই। বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তবে দ্রুত গেট মেরামতি হচ্ছে। ২০১৭-র মতো অবস্থা হবে না বলেই আশা করছি।’’ কারখানায় জলের জোগান নিয়ে অবশ্য মুখে কুলুপ পুর-কর্তাদের।