Hindu Mahasabha

হিন্দু মহাসভার সেই প্রতিমা হিন্দু শাস্ত্রসম্মতই নয়, বলছেন বঙ্গ পুরোহিত সমাজের পুরোধারা

রবিবার সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে রুবি পার্কের অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার দুর্গাপুজোর ছবি। সেই ছবিতে দেখা গিয়েছে, দুর্গাপ্রতিমার সঙ্গে যে অসুর রয়েছে, তার চেহারার সঙ্গে মিল রয়েছে গান্ধীজির।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২২ ১৬:২২
Share:

গান্ধী রূপী অসুরে হিন্দু ধর্মের অবমাননা দেখছে পুরোহিত সমাজ। নিজস্ব চিত্র।

গান্ধীজিকে যাঁরা অসুর বানিয়েছেন, তাঁরা আসলে হিন্দু ধর্মেরই অপমান করেছেন— এমনটাই বলছেন বঙ্গ পুরোহিত সমাজের পুরোধারা। দক্ষিণ কলকাতার রুবি পার্কের অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার দুর্গাপুজোয় মহাত্মা গান্ধীকে ‘অসুর’ হিসাবে দেখানো হয়েছিল। আর সেই পুজো ঘিরে রবিবার থেকে দানা বাঁধতে শুরু করে বিতর্ক। পরিস্থিতি যাতে কোনও ভাবেই হাতের বাইরে না যায়, তাই পুলিশ এসে কুমোর এনে ওই মূর্তিতে গোঁফ লাগিয়ে দেয়। আর এই ঘটনার পরেই হিন্দু মহাসভার পুজো নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গিয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একাংশের মধ্যে।

Advertisement

বিশেষ করে যাঁরা এই সংস্কৃতি নিয়ে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন, তাঁরা গান্ধীকে অসুর বানানোর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। ধর্মীয় কারণে। তাঁদের কথায়, হিন্দু মহাসভার পুজোর ওই মূর্তি হিন্দুধর্ম বিরোধী। এ প্রসঙ্গে সর্বভারতীয় প্রাচ্য বিদ্যা অকাদেমির অধ্যক্ষ জয়ন্ত কুশারী বলেন, ‘‘হিন্দু ধর্মে যে কোনও দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করা হয় ধ্যানমন্ত্র মেনে। শাস্ত্র মেনে হিন্দু ধর্মে দেবীমূর্তি অনূহ করা যাবে না। অনূহ শব্দের অর্থ, যা কোনওভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দেবী দুর্গার ধ্যানমন্ত্রেই আছে, দেবীর রূপ, মহিষাসুর, মহিষ, দেবীর বাহন সিংহের কথা। এই রূপ কোনওভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না। শুনেছি, ওই মূর্তিটিতে গান্ধীজিকে অসুর হিসেবে দেখানো হয়েছে। এটা ধার্মিক ও সামাজিক ভাবে অন্যায়। গান্ধীজি কেন, কোনও মানুষকেই ওখানে অসুর রূপে দেখানো হিন্দু ধর্মের অবমাননা।’’

কালীঘাট মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি বিদ্যুৎ হালদার বলেন, ‘‘হিন্দুধর্ম নিয়ে ওরা ছেলেখেলা করেছে। দেবী দুর্গার মূর্তির গরিমা ও ইতিহাস রয়েছে হিন্দু ধর্মে। এখন থিমের পুজোতেও দেবীর রূপ শিল্পীরা নিজেদের মতো করে বদল করেন। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই কোনও মানুষকে অসুর হিসাবে দেখানোর অনুমতি দেবী দুর্গার ধ্যানমন্ত্রে নেই। তাই দেবীর রূপ পরিবর্তন করে হিন্দু মহাসভা মহাভুল করেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘হিন্দু ধর্মে প্রয়াত যে কোনও মানুষকে শ্রদ্ধার চোখেই দেখা হয়, তাঁকে অসুর বানানো আমাদের ধর্মে নেই। এই ধর্মীয় অনাচার আসলে হিন্দু ধর্মের অপমান।’’

Advertisement

হিন্দু মহাসভার তরফে উদ্যোক্তা চন্দ্রচূড় গোস্বামী অবশ্য মানতে চাননি, তাঁরা কোনওভাবেই হিন্দু ধর্মের অপমান করেছেন। বরং তাঁর যুক্তি, ‘‘গান্ধীকে অসুর দেখানো হয়নি। মিলটা নিতান্তই কাকতালীয়। আমাদের অসুরের চোখে চশমা দেওয়া হয়েছিল কারণ, তাতে আমরা বোঝাতে চেয়েছিলাম মানুষ বিভিন্ন চশমা পরে এই সমাজকে দেখে এবং সে নিয়েও বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে পড়ে যায়, অন্যকেও নিয়ে যেতে চায়। আর মাথায় চুল না থাকার কারণ ছিল, নীরব মোদী, মেহুল চোক্সিরা যে ভাবে দেশের সম্পদ লুট করে পালিয়েছেন, তাঁরা দেশের মানুষের হাতে ধরা পড়লে তাঁদের মাথায় একটা চুলও থাকবে না।’’ চন্দ্রচূড়ের আরও দাবি, ‘‘পঞ্চমীর দিন যখন ঠাকুর এল, তখন কোনও বিতর্ক হল না। ২ অক্টোবর কিছু বদমাইশ লোক ও গান্ধীপ্রেমীরা আমাদের দেবী দুর্গার নীচে থাকা অসুরকে নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করলেন। তাই কোনও ভাবেই আমি বা আমরা হিন্দু ধর্মের অবমাননা করিনি।’’

রবিবার সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে রুবি পার্কের অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার দুর্গাপুজোর ছবি। সেই ছবিতে দেখা গিয়েছে, দুর্গাপ্রতিমার সঙ্গে যে অসুর রয়েছে, তার চেহারার সঙ্গে মিল রয়েছে মহাত্মা গান্ধীর। ঘটনাচক্রে, রবিবার মহাত্মা গান্ধীর ১৫৩তম জন্মদিবস পালিত হয়েছে দেশ জুড়ে। ওই দিনটি আন্তর্জাতিক স্তরে অহিংসা দিবস হিসাবেও পালিত হয়ে আসছে ২০০৭ সাল থেকে। এই আবহে রুবি পার্কের ওই পুজো ঘিরে বিতর্ক ওঠে চরমে। এ বার সেই বিতর্কে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগও যুক্ত হল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement