Durga Puja 2021

Durga puja 2021: ‘আছি’! পুজো আঁকড়ে বাঙালির পশ্চিম

চাকরির সূত্রে, শরীর সারাতে বা অন্য কারণে সে-কালে পশ্চিমের পাহাড় ও টিলায় ঘেরা মধুপুরে থিতু হয়েছিল বহু বাঙালি পরিবার।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৫৭
Share:

মধুপুরের সিদ্ধেশ্বরী দুর্গা মন্দিরের অষ্টধাতুর প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

সেই ঝলমলে সময় নেই, সেই জৌলুসও নেই! তার উপরে থাবা বসিয়েছে কোভিড অতিমারি। তবু মহোৎসবে পিছু হটতে রাজি নন অদিতি সিংহ দত্ত, কল্পনা ঘোষ, মৃত্যুঞ্জয় সিংহেরা! ওঁদের হাত ধরেই এ বার শতবর্ষ উদ্‌যাপন করছে ‘বাঙালির পশ্চিম’ বলে খ্যাত মধুপুরের সিদ্ধেশ্বরী দুর্গাপুজো। একশো বছরে মন্দিরে এসেছে অষ্টধাতুর মাতৃমূর্তি। তবে পুজো হবে চার ফুটের মৃন্ময়ী মূর্তিতেই। আজ, সোমবার বোধনে কোভিড বিধি মেনেই উৎসবের রোশনাইয়ে ভাসবে মন্দির-চত্বর।

Advertisement

চাকরির সূত্রে, শরীর সারাতে বা অন্য কারণে সে-কালে পশ্চিমের পাহাড় ও টিলায় ঘেরা মধুপুরে থিতু হয়েছিল বহু বাঙালি পরিবার। তাদের হাত ধরেই এই পুজোর শুরু। প্রথমে মণ্ডপ তৈরি করেই পুজো হত। কালক্রমে বহুজনের দানে জমি মেলে, তৈরি হয় মন্দির। বংশানুক্রমে পুজোর কর্মকর্তারা যেমন এসেছেন, তেমনই একদা নদিয়া থেকে মধুপুরে থিতু হওয়া ‘পালমশাইয়ের’ পরিবারও প্রতিমা গড়ে চলেছে বংশ পরম্পরায়। রীতি মেনে শুদ্ধাচারে পুজো, ভোগ নিবেদন— সবই হয়। রোজই খিচুড়ি ভোগ। তার সঙ্গে অষ্টমীর দুপুরে পোলাও এবং রাতে শীতল ভোগে লুচি, হালুয়া এবং বোঁদে থাকবেই।

এত দিন হয়ে এসেছে পুজোর জলসাও! সে-কালের কথা ভেবে এখনও অনেকে সুখের স্মৃতি হাতড়ান। পুজো কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক শুভেন্দু দাঁ বলেন, “এক সময় পুজো এলেই মধুপুরে তারকা সমাগম হত। উত্তমকুমার, মান্না দে, অসিতবরণের মতো বহু তারকাই এই পুজোয় এসেছেন।” তিনি জানান, এক সময় সপ্তমী থেকে নবমী, রোজই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। সত্তরের দশকের শেষ পর্যন্ত নিয়মিত নাটকও মঞ্চস্থ হয়েছে। পরে নাটক না-হলেও পুজোর সদস্যদের পরিবারের লোকজনই গান, নাচ, নৃত্যনাট্যের অনুষ্ঠান করতেন।

Advertisement

তবে কোভিডের থাবায় আপাতত সে-সব শিকেয়। মৃত্যুঞ্জয়বাবু জানান, কোভিড বিধি মেনে পুজো করতে হচ্ছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুজোর মেলা বন্ধ রাখা হয়েছে। মাস্ক না-পরে এলে অঞ্জলিও দেওয়া যাবে না। ভোগের পঙ্‌ক্তিভোজও বন্ধ। তার পরে কুপনের বিনিময়ে মাটির হাঁড়িতে ভোগ দেওয়া হবে। পুজোর দিনগুলিতে এমন কিছু করা হবে না, যার আকর্ষণে ভিড় জমতে পারে। দশমীর বিকেলে নমো নমো করেই বিসর্জন হবে স্থানীয় ঝিলপোখরিতে।

মধুপুরের বাতাসে কান পাতলে শোনা যায়, সময় বদলাচ্ছে। প্রতি বছরই কমছে বাঙালি পরিবারের সংখ্যা। তবু হাল ছাড়তে রাজি নন মাটি আঁকড়ে থাকা বাঙালিরা। পুরনো সেই সব দিনের স্মৃতি আর আগামী দিনের আশা, এই নিয়েই জ্বলে ওঠে আলো, বেজে ওঠে পুজোর ঢাক!

উৎসবের সূত্রেই বেঁচে ওঠে আবহমান কালের বাঙালির পশ্চিম!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement