ময়ূরেশ্বরের রামসায়র পাড়ের পুজোর প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র
এত দিন পুজোর নানা জিনিস জুগিয়ে এসেছেন ওঁরা। এ বার গ্রামে প্রথম নিজেদের পুজো করবেন তাপস বাগদি, গৌর বাগদি, গোপাল বাসকিরা। সেই উদ্যোগ আবার সফল হতে চলেছে আবুল আহাদ শেখ, জগন্নাথ শেখ, লাইলি বিবিদের সার্বিক সহযোগিতায়।
প্রথম পুজোর আনন্দে এখন মেতে বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের রামসায়র পাড়ের বাসিন্দারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, পাশের গ্রামে পুজোটা যেন থেকেও ছিল না। পুজোর দিন কাটত নিরানন্দে। সেই আক্ষেপ দূর হয়েছে পাশের কীর্তিহাট গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনেরা এগিয়ে আসায়। তাঁদের সহযোগিতায় রামকৃষ্ণপুর শিবা যুবকেন্দ্রের পরিচালনায় পুজো চালু হতে চলেছে ওই গ্রামে। স্বভাবতই গ্রাম জুড়ে খুশির হাওয়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরেশ্বরের ওই গ্রামে ১১০টি তফসিলি এবং আদিবাসী পরিবারের বাস। অধিকাংশ দিনমজুর। কেউ পদ্মফুল চাষ করেন। কেউ বা ঢাক বাজান। কেউ প্রাণী পালন করেন। তাঁদের কাছ থেকে অন্যত্র পুজোর ফুল যায়। কেউ ঢাক বাজাতেও যান। কিন্তু, তাঁদের নিজেদের গ্রামে পুজো ছিল না। তাপস বাগদি, গৌর বাগদিরা বলছেন, ‘‘আশেপাশের বহু পুজোমণ্ডপে আমরা নানা কিছু জুগিয়েছি। কিন্তু, পুজোর দিনগুলি কেমন মনখারাপে কেটেছে। কেননা তেমন ভাবে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাইনি।’’ সেই আক্ষেপ দূর হয়েছে কীর্তিহাট গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনের সহযোগিতায়। গ্রামের মনসা মন্দিরে পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। ডেকরুন বিবি, লাইলি বিবিরা বলছেন, ‘‘গ্রামে পুজো নেই বলে রামসায়র পাড়ের বাসিন্দাদের আক্ষেপ আমরা জানি। আমরা সবাই ওদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিই।’’
পুজো চালু হওয়ায় গ্রামে খুশির মেজাজ। দশম শ্রেণির ছাত্রী কোয়েল দাস, রাহুল রজকরা এখন থেকে পড়ে রয়েছে মণ্ডপে। তারা বলছে, পুজোয় অন্য গ্রাম যখন সরগরম তখন আমাদের গ্রাম ঝিমিয়ে থাকত। এ বার জমিয়ে আনন্দ হবে। একই অভিব্যক্তি গৃহবধূ উর্মিলা দাস, মল্লিকা দাসদেরও। তাঁরা বলছেন, ‘‘গ্রামে পুজো ছিল না বলে এত দিন আমরা পুজোর সময় আত্মীয়দের বলতে পারিনি। বরং অনেকেই গ্রাম ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যেত। সবাইকে পুজো দেখতে আসতে বলে দিয়েছি।’’ আয়োজক সংস্থার সভাপতি কৃষ্ণধর দাস এবং সম্পাদক বৈদ্যনাথ দাসেরা জানান, পুজো চালু করতে বাধা ছিল আর্থিক সঙ্গতি। সংখ্যালঘু ভাইবোনেরা পাশে এসে দাঁড়ানোয় সবার ইচ্ছেপূরণ হল।