বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ। -নিজস্ব চিত্র।
একা রামে রক্ষা নেই সুগ্রীব দোসর! বর্ধমান শহর-সহ গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলায় করোনা সংক্রমণ যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তখন জেলার বেহাল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো পরিস্থিতিকে আরও সঙ্কটজনক করে তুলেছে।
জেলার কোনও বেসরকারি হাসপাতালেই আর কোভিড রোগীদের জন্য চিকিৎসার আলাদা ব্যবস্থা নেই। আইসিইউ-তে শয্যার অভাব বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ সরকারি হাসপাতালেও। ফলে, সঙ্কটজনক অবস্থায় কোভিড রোগীদের নিয়ে কলকাতা ছুটতে হচ্ছে পরিজনদের। কিন্তু তার জন্য লাইফ সাপোর্ট ব্যবস্থা রয়েছে এমন অ্যাম্বুল্যান্সেরও অভাব যথেষ্টই।
শুক্রবার শুধুমাত্র পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬৬ জন। আর বর্ধমান শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ১২৫। শনিবার গোটা জেলায় নতুন করে আক্রান্ত ২৭৩ জন। বর্ধমান শহরে সংখ্যাটা ১১০। পূর্ব বর্ধমানের কোভিডের গ্রাফ গত এক মাস ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। বেলাগাম করোনা সংক্রমণ রুখতে প্রশাসন বেসামাল হয়ে পড়েছে।
দিন দু’য়েক আগে বোরহাটের এক বাসিন্দা পার্থসারথি বসু কোভিড আক্রান্ত হয়ে বর্ধমান হাসপাতালে মারা যান। চিকিৎসকরা তাঁকে আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু হাসপাতালে আইসিইউ-এর শয্যা খালি না থাকায় তাঁকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই হাসপাতালে মারা যান তিনি। বর্ধমান শহরে তৃণমূলের এক যুবনেতার মা শুক্রবার সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। তাঁদের পরিবারের দাবি, বর্ধমান শহরে কোভিড পরিস্থিতিতে সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকার জন্য তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়।
জেলা প্রশাসন অবশ্য এই অভিযোগ মানতে রাজি নয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বলেন, ‘‘১৪০টি বেড আছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আছে ১০টি আইসিইউ।’’
তিনি জানান, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাশাপাশি জেলা কৃষিখামারেও ১০০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসার কোনও পরিকাঠামো নেই বলে অভিযোগ আক্রান্তদের।
হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সবই চলছে ভ্যাগ্যের উপরে। সারি সারি ওয়ার্ডকে কোভিড বলে জোর করে চালানোর চেষ্টা করছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। অথচ সেখানে কোনও পরিকাঠামো নেই চিকিৎসার। মিলছে না অক্সিজেনও।’’ জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা জানিয়েছেন, নতুন কিছু নির্দেশ এসেছে পরিকাঠামো সংক্রান্ত। সেগুলি কার্যকর করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।