Anganwadi

Anganwadi: টানাটানির সংসারে পাতে খাবার কমেছে অঙ্গনওয়াড়িতে

অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীরা জানাচ্ছেন, আগে ভাতের সঙ্গে তরকারি থাকত। কিন্তু অগস্ট মাস থেকে যে নতুন মেনু হয়েছে, তাতে তরকারি বাদ গিয়েছে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২২ ০৭:৩৭
Share:

করুণ: গার্ডেনরিচের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশুদের থালায় শুধু ভাতের সঙ্গে ডিম। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

অ্যালুমিনিয়ামের ছোট পাত্রে ফ্যানভাত। সঙ্গে একটি সেদ্ধ ডিম। অঙ্গনওয়াড়ির কচিকাঁচাদের এটাই দুপুরের মেনু।

Advertisement

শহরের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের রাঁধুনি বা সহায়িকা শুকতারা মণ্ডল বললেন, ‘‘শিশুরা শুকনো ভাত আর সেদ্ধ ডিম কী ভাবে খাবে? তাই একটু নুন মিশিয়ে ফ্যানভাত করা হয়েছে।’’ তবে গোটা ডিম রোজ জোটে না শিশুদের।সোম, বুধ ও শুক্রবার স্রেফ ভাত আর গোটা ডিম। মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার মেলে অর্ধেক ডিম। কারণ, সে দিন ভাতের বদলে পাতে পড়ে খিচুড়ি।

অঙ্গনওয়াড়ির এই মেনু শুধু সদ্যোজাত থেকে ছ’বছরের শিশুদের জন্যই নয়, প্রায় একই খাবার পান সদ্যোজাত শিশুর মা ও সন্তানসম্ভবা মহিলারাও। অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীরা জানাচ্ছেন, আগে ভাতের সঙ্গে তরকারি থাকত। কিন্তু অগস্ট মাস থেকে যে নতুন মেনু হয়েছে, তাতে তরকারি বাদ গিয়েছে। সোম, বুধ ও শুক্রবার সকালের এবং দুপুরের খাবার মিলিয়ে শিশুদের মাথাপিছু বরাদ্দ ৮ টাকা ৫৯ পয়সা। সদ্য মা হওয়া মহিলা ও গর্ভবতীদের জলখাবারের ব্যবস্থা নেই। তাঁদের দুপুরের খাবারে মাথাপিছু বরাদ্দ ৭ টাকা ৮০ পয়সা। শিশুদের বরাদ্দ একটু বেশি। সেই অতিরিক্ত টাকায় সকালের জলখাবারে মিলছে ছাতু। মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার শিশু-পিছু বরাদ্দ ৮ টাকা এবং গর্ভবতী ও নতুন মায়েদের জন্য ৯ টাকা ৫০ পয়সা। মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার বাচ্চারা অর্ধেক ডিম পেলেও মায়েরা পান গোটা ডিম।

Advertisement

শহরে ছড়িয়ে থাকা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির একটি গার্ডেনরিচের এক নম্বর ওয়ার্ডের ‘বেবি চৌধুরী হাউস নম্বর ওয়ান শিশু আলয়’। বেবি চৌধুরী নামে এক মহিলার বাড়ির সামনের ঘরেই চলে কেন্দ্রটি। তিন থেকে ছ’বছরের গোটা পনেরো শিশু বেলা ১২টা নাগাদ জোরে জোরে পড়া মুখস্থ করছিল। পড়াচ্ছিলেন বেবি। তিনি বললেন, ‘‘এরা আগে ভাতের সঙ্গে তরকারি পেত। এখন তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফ্যানভাত দেওয়া হয়। কারণ, শুকনো ভাত ডিম সেদ্ধ দিয়ে খেতে গেলে গলায় আটকে যেতে পারে।’’ অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীরা অবশ্য জানালেন, সেদ্ধ ডিম নয়, মেনুতে বলা আছে ডিমের ঝোল করতে। ‘পশ্চিমবঙ্গ আইসিডিএস কর্মী সমিতি’র সম্পাদক শীলা মণ্ডল বললেন, ‘‘ডিমের ঝোল করতে হলে তার মাথাপিছু বরাদ্দ মাত্র ১১ পয়সা। তাতে ঝোল কী ভাবে হবে?’’ যে ঘরে পড়াশোনা হচ্ছে, তার পাশের ঘরেই তখন প্রেশার কুকারে ভাত হচ্ছে। শুকতারা বললেন, ‘‘আজ ভাতের সঙ্গে শুধু ডিম নয়, এক টুকরো আলু সেদ্ধও পাবে ওরা। এই আলু সেদ্ধ আসলে মায়েদের বরাদ্দ। প্রত্যেক মা ৮৪ পয়সার আলু সেদ্ধ পান। সেখান থেকেই বাচ্চাদের একটু করে দিই।’’

দুপুর ১টা নাগাদ শিশুদের জন্য এল গরম ফ্যানভাত আর ডিম সেদ্ধ। সেই সঙ্গে সেদ্ধ আলুর ছোট টুকরো। বেবি বললেন, ‘‘মাথাপিছু পাঁচ পয়সার সয়াবিন বরাদ্দ ছিল। সয়াবিনের একটা প্যাকেটের দামই ১০ টাকা। অন্য জায়গা থেকে কাটছাঁট করে পাতে সয়াবিনও দিতাম।’’

গ্যাসের দাম বাড়ায় অঙ্গনওয়াড়ির সংসারে আরও টানাটানি। বেবি জানালেন, জ্বালানির জন্য দৈনিক বরাদ্দ ২১ টাকা। ছুটিছাটা বাদ দিলে মাসে তা দাঁড়ায় ৫২৫ টাকার মতো। তাই বেবির প্রশ্ন, ‘‘একটি সিলিন্ডারের দামই যেখানে প্রায় ১১০০ টাকা, সেখানে সারা মাস জ্বালানির খরচ চালাব কী করে?’’ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা জানালেন, চাল, গম, বাদাম, মুসুর ডালের গুঁড়ো, তেল, ভিটামিন এবং সামান্য চিনি দিয়ে পুষ্টিকর লাড্ডু তৈরির পরিকল্পনা করেছিল দিল্লির জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি পর্ষদ। সেই লাড্ডু গর্ভবতী ও মায়েদের পুষ্টির ঘাটতি অনেকটাই মেটাতে পারে।এখন মায়েদের পুষ্টির জন্য শুধু সেদ্ধ ডিমই ভরসা।

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অঙ্গনওয়াড়ি ওয়ার্কার্স অ্যান্ড হেল্পার্স ইউনিয়ন’-এর রাজ্য সম্পাদক মাধবী পণ্ডিত বললেন, ‘‘খাবারের খরচ কেন্দ্র এবং রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতর ভাগাভাগি করে দেয়। কেন্দ্র বরাদ্দবাড়ায়নি।রাজ্যও বাড়াচ্ছে না। আমরা রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজাকে অনেক বার লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। বরাদ্দ তো বাড়েইনি, উল্টে কমে গিয়েছে।’’

কেন?

মন্ত্রী শশী পাঁজা বললেন, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্যের ৫০ শতাংশ করে দেওয়ার কথা। তাই কেন্দ্র বরাদ্দ না বাড়ালে আমরা বাড়াতে পারি না। আমরা কেন্দ্রকে অনেক বার বরাদ্দ বাড়াতে বলেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement