মহাকুম্ভ মেলা প্রাঙ্গণ থেকে প্রয়াগরাজ বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে সেই স্তম্ভ। ছবি : সংগৃহীত।
এক কালে ‘ইলাহাবাদ’ বলে পরিচিত শহরের নামটিই বদলে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের আমলে তীর্থক্ষেত্র প্রয়াগ শহরের নতুন নাম হয়েছে প্রয়াগরাজ। এ বার বদলাচ্ছে শহরের দৃশ্যপটও। আর দশ দিন পরেই মহাকুম্ভ আয়োজিত হতে চলেছে প্রয়াগরাজে। সেই উপলক্ষে শহরের একটি রাস্তা বিশেষ ভাবে সাজাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। রাজস্থান থেকে আনা ৮৪টি লাল পাথরের স্তম্ভ বসানো হচ্ছে পথের ধারে। তার জন্য ১৭ কোটি টাকা খরচও করছে যোগীর সরকার। কেন? উত্তরপ্রদেশের নগরোন্নয়ন দফতর জানাচ্ছে, মহাকুম্ভে প্রয়াগরাজে এসে পর্যটকেরা যদি ওই ৮৪টি পাথরের স্তম্ভ পরিক্রমা করেন, তবে তা হবে ব্রহ্মাণ্ড পরিক্রমার সমতুল।
মহাকুম্ভ থেকে প্রয়াগরাজের বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে ওই ৮৪টি লাল পাথরের স্তম্ভের নাম ‘আস্থা স্তম্ভ’, অর্থাৎ বিশ্বাসের স্তম্ভ। আর এক একটি বিশ্বাসের স্তম্ভ নির্মাণে খরচ পড়েছে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। প্রতিটি স্তম্ভে লেখা রয়েছে শিবের ১০৮ নাম। মাথায় রয়েছে একটি করে ঘট বা কলস। উত্তরপ্রদেশের নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব অমৃত অভিজাত এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘এক একটি স্তম্ভ হিন্দু সনাতন ধর্মের শক্তির রূপ যোনির প্রকাশ। এক একটি স্তম্ভ এক লক্ষ যোনির সমতুল। যাকে হিন্দু দর্শনে সৃষ্টির মূল বলে ব্যাখ্যা করা হয়। তাই ৮৪টি স্তম্ভ পরিক্রমণ করলে এক জন পুণ্যার্থী ৮৪ লক্ষ যোনির পরিক্রমা করবেন। যা প্রতীকী ভাবে সৃষ্টির আদি অবস্থা পরিক্রমারই সমতুল।’’ উল্লেখ্য, সনাতন ধর্মের বিশ্বাস মতে জীবাত্মা ৮৪ লক্ষ যোনি জন্মান্তর প্রক্রিয়ায় ভ্রমণ করে। এই ভ্রমণ শেষ হলেই পুনর্জন্মচক্র থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বিষয়টি আরও বিশদ ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন আচার্য মিথিলেশ নন্দানি শরণ। আস্থা স্তম্ভের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে মিথিলেশ লিখেছেন, ‘‘বলা হয়, জীবন-মৃত্যুর যে অনন্ত চক্র তার মধ্যে নিজের প্রকৃত রূপ বোঝার চেষ্টায় আমাদের আত্মা নিজেকে ৮৪ লক্ষ বার বদলায়। ওই পরিবর্তনের চক্র আবার চার ভাগে বিভক্ত। আত্মা শরীর লাভ করার পরে চার পুরুষার্থ ধর্ম, অর্থ, কর্ম এবং মোক্ষ পাওয়ার জন্য চার আশ্রম ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাসের মধ্যে দিয়ে যায়। আত্মার ওই সফরের মূল শক্তি হল বিশ্বাস। তাই চার আশ্রম, চার পুরুষার্থকে মাথায় রেখে এক দিক ৮৪টি আস্থা বা বিশ্বাসের স্তম্ভকে চার সমান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আবার আত্মার ৮৪ লক্ষ জন্মের প্রতীক হিসাবে ৮৪ স্তম্ভ হয়েছে ৮৪ লক্ষ যোনির প্রতীক।’’
রাজস্থানের বাঁশি পাহাড়পুর থেকে লাল বালিপাথর এনে তৈরি করা হচ্ছে এক একটি স্তম্ভ। চার ভাগে বিভক্ত (প্রতি ভাগে ২১টি করে) ওই ৮৪ স্তম্ভ তৈরির কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন নির্মাণ সংস্থার এগ্জ়িকিউটিভ মীনাক্ষ পায়ল। ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মহাকুম্ভ মেলা। মীনাক্ষ বলেছেন, ৫ জানুয়ারি, অর্থাৎ আগামী রবিবারের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে। আপাতত প্রয়াগরাজে অপেক্ষা দর্শনার্থীদের আগমনের।