জলের তলায় চাষের জমি। ফাইল চিত্র।
বর্ষা শেষের আনাজ চাষ শুরুর মুখেই মাথায় হাত ভাঙড়ের রিন্টু মোল্লা, মেহেবুব রহমানদের। তাঁদের আক্ষেপ, গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে দেড়-দু’মাসের পরিশ্রমের নিট ফল কার্যত শূন্য। খেতে জল দাঁড়িয়ে ফুলকপি, বাঁধাকপির দফারফা। গ্রামবাংলায় মরসুমের প্রথম কপি ওঠার মুখেই জোর ধাক্কা। ফলে পুজোর ভোগের খিচুড়ির সঙ্গী কপিতেও টান পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বৃষ্টির জেরে বর্ষাশেষের প্রায় সব আনাজেরই দাম এখন ফের ঊর্ধ্বমুখী। পুজোর ভোগের বাড়তি চাহিদার ধাক্কায় বাঙালির পছন্দের কপির দামও এক লাফে বেড়ে যেতে পারে অনেকটাই।
ভাঙড়ের চাষিরা বলছেন, চাষের সময় বা ফসল তোলার মুখে খেতে এত জল আদৌ সহ্য করতে পারে না কপি। ভাঙড়ে কোটি কোটি কপি তাই ফেলে দিতে হয়েছে। এমনকি পৌষ বা মাঘের ফলনের দিকে তাকিয়ে কপির বীজ থেকে তৈরি করা দানার অবস্থাও জলে ডুবে সঙ্গিন। ফলে শীতের পরবর্তী পর্যায়ের কপির ফলনেও টান পড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
আজকাল কপি অবশ্য শুধু শীতের আনাজ নয়। বছরভর বাঙালির পাতে হিমাচল বা বেঙ্গালুরুর কপির দেখা মেলে। পুজোর মুখে পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকে রাঁচীর কপিও ঢুকতে শুরু করেছে। ঠিক এই সময়েই ভাঙড়-সহ দুই ২৪ পরগনার নানা এলাকার ফুলকপি, বাঁধাকপির জোগান ঢুকে কপির বাজারদর অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু এ বার বর্ষাশেষের লাগাতার বৃষ্টি কপির দফারফা করে ছেড়েছে।
আট বিঘা জমিতে ১০ হাজার বাঁধাকপি, ২০ হাজার ফুলকপি ফলিয়েছেন ভাঙড়ের মেহেবুব রহমান। চাষের খরচ মোটামুটি ৭০ হাজার টাকা। এই কপি ১৫ টাকা পিস হিসেবে পাইকারি বাজারে বেচতে পারলেও হাতে আসত লাখ তিনেক টাকা। এখন সবটাই জলে।
রিন্টু মোল্লার কথায়, ‘‘ভাঙড়ে শুধু উঁচু জায়গায় কপি বা কপির দানা বেঁচেছে। বাকি সব শেষ!’’ সোমবার কলকাতার পাইকপাড়া বা বাঁশদ্রোনিতে বাঁধাকপি বিকিয়েছে ৫০ টাকায়। ফুলকপির দাম ২৫-৩৫ টাকা। আনাজের ভেন্ডর সংগঠনের কর্তা তথা কোলে মার্কেটের মুখপাত্র কমল দে জানাচ্ছেন, পুজোয় কপির দাম আরও বাড়তে পারে।
একই সঙ্গে ভাঙড় বা কাকদ্বীপ জলের তলায় চলে যাওয়ায় লঙ্কার ফলনেরও দফারফা। কলকাতা সংলগ্ন নানা এলাকায় পালং শাক বা ক্যাপসিকাম চাষ যতটুকু শুরু হয়েছিল, তার অবস্থাও বিপর্যস্ত।
বর্ষার বিভিন্ন আনাজের ফলন এখন কমে আসছে। তার উপরে বৃষ্টির ধাক্কা। এর ফলেও দাম বাড়ছে। বনগাঁ লাইনের গোপালনগরের শীতল প্রামাণিক বলছেন, রবিবারের হাটে পটলের দাম ৩০ টাকা কেজি। ১৭-১৮ টাকা ছিল এক সপ্তাহ আগে। কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের উৎকলীয় পাইস হোটেলের কর্মচারী গৌরাঙ্গ মাইতি বলছেন, কলেজ স্ট্রিটে এক সপ্তাহে বেগুন, টোম্যাটো, ঝিঙে, উচ্ছে, পুঁইশাক— সব কিছুরই দাম ১০-২০ টাকা বেড়েছে। স্থানীয় কপি না-পেলে কপির দামও নির্ঘাত বাড়বে। অতএব পুজোর মেনুতে ফুলকপির ডালনা বা মাছ দিয়ে বাঁধাকপির পদে টান পড়ারও সমূহ সম্ভাবনা।