ফাইল ছবি
সেই কবে রূপরাম চক্রবর্তীর মঙ্গলকাব্যে লাউসেনকে সঙ্গে মুড়ি রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন রঞ্জাবতী। ইতিহাসবিদেরা বলেন, তারও অনেক আগে থেকেই বাঙালির মুড়ি-প্রীতির শুরু। ব্র্যান্ডেড প্যাকেটের মুড়িতে জিএসটি বসাতেই সেই মুড়ির দাম বেড়েছে। তবে রাজ্যের প্রায় সব প্রান্তে খোলা মুড়ির দামও ঊর্ধ্বমুখী।
পূর্ব বর্ধমানের মুড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, গত সাত দিনে মুড়ির দাম কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়েছে। কালনার ব্যবসায়ী সূর্যদীপ পালের কথায়, ‘‘পাঁচশো গ্রামের মুড়ির প্যাকেট সপ্তাহখানেক আগেও বেচতাম ৪০ টাকায়। এখন বেচছি ৫০ টাকায়।’’ হাতে ভাজা মুড়ি আগে পাঁচশো গ্রাম ৪২ টাকায় বিক্রি হত। এখন তা-ও ৫০ টাকায় ঠেকেছে।
তবে কিছু ব্যবসায়ীর দাবি, জিএসটি-র সঙ্গে সঙ্গে ধানের দাম বৃদ্ধির জন্যও মুড়ির দাম বাড়ছে। যেমন পুরুলিয়ার খাবার বিক্রেতা রাজেন পরামানিক বলেন, ‘‘আগে খোলা মুড়ি কেজিতে ৩৮ টাকায় কিনতাম। এখন সেটার দাম ৫০ টাকা। মুড়িরকারখানা জানাচ্ছে, চালের দাম বৃদ্ধিই এর মূল কারণ।’’
পুরুলিয়ার কাশীপুরের তরণী মণ্ডল বাড়িতে মুড়ি ভেজে বিক্রি করেন। তাঁর কথায়, ‘‘মুড়ির চালের দাম কুইন্টালে ৮৫০ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।’’ মুর্শিদাবাদের নওদার এক মুড়ি মিলের মালিক সুরেশ ঘোষ বলেন, ‘‘মাসখানেক আগে মুড়ি তৈরির যে চাল ২৭-২৮ টাকা কেজি ছিল, সেই চালের দাম এখন ৪০ টাকা কেজি। মুড়ির দামও তাই বেড়েছে।’’
ব্যবসায়ীদের দাবি, সে কারণেই ব্র্যান্ডেড নয়, এমন স্থানীয় মুড়ি এবং মিলের মুড়িও দামি হয়েছে। মুর্শিদাবাদে সপ্তাহখানেক আগেও এলাকার কারখানায় তৈরি মুড়ির খুচরো দাম ছিল ৫০-৫৫ টাকা কেজি। পাইকারি ওই মুড়ি বিক্রি হত ৪০-৪৫ টাকা কেজিতে। দিন কয়েক ধরে মুড়ির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০-১৫ টাকা। খুচরো বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েক দিন ধরে মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে। যার পাইকারি দাম ৫০-৫৫ টাকা কেজি। দুই মেদিনীপুরে এমন স্থানীয় ভাবে প্যাকেট করা মুড়ির যথেষ্ট কদর থাকলেও তার দাম তেমন বাড়েনি। তবে খোলা মুড়ির দাম কেজিতে ৩-৫ টাকা বেড়েছে। নদিয়াতেও তাই।
আবার কোচবিহারে খোলা এবং প্যাকেট, দু’ধরনের মুড়ির দামই বেড়েছে। খোলা মুড়ির দাম প্রায় ১০ টাকা বেড়ে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলিপুরদুয়ারে খোলা মুড়ির দাম বেড়েছে কেজিতে সাত টাকা। জলপাইগুড়িতেও খোলা মুড়ির দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে দশ টাকা। মালদহে খোলা মুড়ির দাম বেড়েছে কেজি প্রতি পাঁচ টাকা। উত্তর দিনাজপুর জেলায় মুড়ি খোলা বাজারে কেজি প্রতি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই জেলায় প্যাকেটের মুড়ির তেমন কদর নেই।
কিন্তু যেখানে তা রয়েছে, যেমন হাওড়া ও হুগলির বিভিন্ন এলাকায় কেজি প্রতি মুড়ির দাম বেড়েছে ৮ টাকা। হাওড়ায় ৪২ টাকার মুড়ি বিকোচ্ছে ৫০ টাকায়। আবার হুগলির আরামবাগে এক সপ্তাহ আগেও ৩৮ টাকায় এক কিলো মুড়ি বিক্রি হত। এখন দাম ৪৬ টাকা।