প্রতীকী ছবি।
কোভিড অতিমারির ধাক্কায় ১০০ জনের মধ্যে ৯২ জন শিশুই ভুলে গিয়েছে স্কুলে শেখা ভাষার প্রাথমিক পাঠ। ৮২ জন ভুলেছে সাধারণ যোগ-বিয়োগের মতো অঙ্কও। সম্প্রতি এমনই মারাত্মক পরিসংখ্যান উঠে এল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের সংগঠন ‘শিক্ষা আলোচনা’-র সমীক্ষাভিত্তিক রিপোর্ট ‘লার্নিং টুগেদার: দি অপর্চুনিটি টু অ্যাচিভ ইউনিভার্সাল এডুকেশন’-এ। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ৭২০৪ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে সমীক্ষাটি করা হয়।
গোটা দেশেরই একই অবস্থা। জঁ দ্রেজের নেতৃত্বে দেশের পনেরোটি রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে, এই অতিমারির আবহে গ্রামাঞ্চলে মাত্র ২৮ শতাংশ, এবং শহরাঞ্চলে ৩৭ শতাংশ ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করছে।
‘শিক্ষা আলোচনা’-র সমীক্ষার সঙ্গে যুক্ত এক প্রাথমিক শিক্ষক জানান, ক্লাসঘরে পঠনপাঠনের পরিবর্তে অনলাইন ব্যবস্থায় সরে যাওয়ার ফলে বহু ছাত্রছাত্রী প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। অনেক পরিবারের পক্ষেই অনলাইন লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, অতিমারির গোটা সময়কাল জুড়ে সমীক্ষার অন্তর্ভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ২৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর সঙ্গেই শিক্ষকদের, অথবা স্কুলের কোনওরকম যোগাযোগ হয়নি।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, পুজোর পরই খুলতে পারে স্কুল। তা হলে কি শিশুদের লেখাপড়ায় যে ঘাটতি হয়েছে, এ বার সেই সমস্যা দূর হবে? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী মনে করিয়ে দিলেন, আসল সমস্যা শুরু হবে সেই সময় থেকে। শিশুদের শিক্ষায় যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, প্রচলিত স্কুলব্যবস্থায় তা পূরণ করা সম্ভব হবে না। তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা চাই। শুধু শিক্ষকরা নন, এগিয়ে আসতে হবে সমাজের অন্যদেরও।
রিপোর্টটির প্রকাশ উপলক্ষে এক অনলাইন আলোচনাসভায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূতপূর্ব সচিব ও প্রতীচী ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো দিলীপ ঘোষ মনে করিয়ে দিলেন, অতিমারির ফলে এক একটি ছাত্রছাত্রী এক-এক ভাবে পিছিয়ে পড়েছে। কাজেই, প্রত্যেকের প্রয়োজনকে আলাদা ভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার ও লেখিকা অনিতা অগ্নিহোত্রী বলেন, শিক্ষকদের এই উদ্যোগ সরকারি পরিকাঠামোকে কী ভাবে সবচেয়ে ভাল কাজে লাগাতে পারে, সে দিকে নজর দেওয়া দরকার।