খানাকুলের রামমোহন রায় কলেজে ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের শিবিরে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে লাঠি উঁচিয়ে পুলিশ। শনিবার। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
মাথা থেকে গড়াচ্ছে রক্ত। তবু মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছেন লাইনে। পিছন থেকে ঠেলায় মাটিতে গড়িয়ে পড়ছেন অনেকে। তেমনই ধাক্কা খেয়ে পাথরে লেগে মাথা ফেটে যায় বীণা দাসের। জলপাইগুড়ি শহরতলির খড়িয়া পঞ্চায়েত অফিস লাগোয়া প্রাথমিক স্কুলের ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরে শনিবার এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে! স্কুলের পাশ দিয়েই গিয়েছে ব্যস্ত সড়ক। বাসিন্দাদের লাইন রাস্তায় চলে আসায় যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরে কিংবা ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে নাম লেখানোর জন্য অহেতুক ভিড় না-করার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলায় জেলায় শিবিরের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। তার ফলে শুরুর দিকের ভিড় ও বিশৃঙ্খলা অনেকটা এড়ানো গেলেও বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু জায়গায় তা ঘটছেই।
যেমনটা ঘটল হুগলির খানাকুলেও। হুগলিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণে ৯০৭টি শিবির থেকে বাড়িয়ে ২২৭৮টি করা হয়েছে। অথচ এ দিন সকালে খানাকুলের রামমোহন কলেজে ফটক খুলতেই স্রোতের মতো মানুষজন ঢুকতে থাকেন। হুড়োহুড়িতে জনা দশেক মহিলা পড়ে গিয়ে চোটও পান। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা হয়। পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে, মানিকলাল সিংহ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিবিরে কে আগে আবেদনপত্র জমা দেবেন, তা নিয়ে রীতিমতো ধস্তাধস্তি চলে এ দিন। বৃষ্টির মধ্যে ভিজেও অনেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় ১ ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েতে দুয়ারে সরকারের দশটি ক্যাম্প হয়। ভোর থেকেই ভাঙড় মহাবিদ্যালয়ের ক্যাম্পে এত ভিড় হয়ে যায় যে, সকাল সাড়ে ৬টা থেকেই লক্ষ্মীর ভান্ডারে ফর্ম বিতরণ করতে হয়।
উল্টো ছবিও দেখা গিয়েছে। হাওড়ায় প্রতিটি পঞ্চায়েত এবং পুরসভায় শিবিরের বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। সেই কারণে শিবিরের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই কমেছে ভিড়ও। মালদহে এ দিন থেকেই বুথস্তরে ভাগ করে ‘দুয়ারে সরকার’ শুরু হওয়ায় তুলনামূলক কম ভিড় হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন ব্লকেও অতিরিক্ত শিবির হওয়ায় উপচানো ভিড় ছিল না। তবে, গড়বেতা ১ ব্লকে ভিড় সামলাতে অতিরিক্ত পুলিশ চেয়েছেন বিডিও। মহরমের জন্য বন্ধ থাকার পরে এ দিন বীরভূমের বিভিন্ন শিবিরে ভালই ভিড় হয়েছে। কিন্তু, বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়নি কড়া প্রশাসনিক নজরদারিতে।
স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গের ছবি অবশ্য দেখা গিয়েছে প্রায় সব শিবিরেই। লাইনে দাঁড়ানো বাসিন্দাদের অনেকেরই মাস্ক ছিল না। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে লাইনও ছিল। করোনার সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রাখলে যা চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনের।