রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল থেকে আরএল স্যালাইনের নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার রানাঘাটে। ছবি: সুদেব দাস
রিঙ্গার ল্যাকটোজ় (আরএল) স্যালাইন দেওয়ার পরে রোগীদের কাঁপুনি হওয়ায় বৃহস্পতিবার রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল থেকে তার নমুনা পরীক্ষা করতে নিয়ে গিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল। অথচ প্রসূতি মৃত্যুর পরে সন্দেহের তালিকায় আসা ওই স্যালাইন পরীক্ষার রিপোর্ট এক বছরেও তারা দিতে পারেনি।
নদিয়ার ওই হাসপাতাল সূত্রের খবর, ২০২৩ সালের জুলাই-অগস্টে সেখানে প্রসূতি-মৃত্যুর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল। সিজ়ারের পরে যে সব প্রসূতিকে একটি নির্দিষ্ট ব্যাচের আরএল স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের অবস্থা হঠাৎ খারাপ হতে শুরু করে। শ্বাসকষ্ট, কাঁপুনি, রক্তাল্পতার সঙ্গে প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটা কমে যায়। যদিও নদিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাসের মতে, “আরএল স্যালাইনের জন্য নয়, প্রসবকালে উচ্চ রক্তচাপের কারণে ওই প্রসূতিদের মৃত্যু হয়েছিল।”
অন্য অস্ত্রোপচারের রোগীদেরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। বিপদ বুঝে ওই ব্যাচের স্যালাইন ব্যবহার বন্ধ রেখে স্বাস্থ্য দফতরে খবর দেওয়া হয়। রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের সুপার প্রহ্লাদ অধিকারী শুক্রবার বলেন, “এর পর স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা পরিদর্শনে আসেন। ড্রাগ কন্ট্রোল ওই স্যালাইনের নমুনা নিয়ে যায়, তবে তার রিপোর্ট এখনও পাইনি।” নির্দিষ্ট ব্যাচের ওই স্যালাইন এখনও হাসপাতালের স্টোরে আলাদা করে রাখা আছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে ব্যবহার করা না গেলে তা নিয়ম অনুযায়ী ফেরত পাঠানো হবে।
চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ হওয়া সরকারি আরএল স্যালাইনে যে গোলমাল ছিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ, প্রায় একই সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন ছোট-বড় হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে ওই গোলমাল বোঝা গিয়েছিল। কেন এই গোলমাল, তা বুঝতেই ড্রাগ কন্ট্রোলের রিপোর্ট পাওয়া জরুরি। অন্যথায় বিষয়টি স্রেফ ধামাচাপা পড়ে যাবে।
এক বছরে রিপোর্ট কেন এল না, তা নিয়ে কি রানাঘাট হাসপাতালের তরফে খোঁজখবর করা হয়েছিল? সুপারের বক্তব্য, “যাঁরা নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছেন, সময় মতো রিপোর্ট দেওয়া তাঁদেরই দায়িত্ব। তা ছাড়া, ড্রাগ কন্ট্রোলের বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে নয়।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের বিশেষ সচিব অভিষেক তিওয়ারি বর্তমানে ড্রাগ কন্ট্রোলের বিষয়টি দেখেন। এ দিন ফোন করা হলে তিনি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।