ইসরো-র ক্যাম্পাসে ইউসরা আলম (চিহ্নিত)। —ফাইল চিত্র।
সকাল সওয়া ৭টা নাগাদ বিমান বেঙ্গালুরুর মাটি ছুঁতেই হৃৎস্পন্দন যেন অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল, জানাচ্ছে ইউসরা আলম। যে মহাকাশের নানা কথা এত দিন ‘ইন্টারনেট’, বইয়ে পড়েছে, দেখেছে টিভিতে—সেই মহাকাশের রহস্য সন্ধানের অন্যতম আঁতুড়ঘরে ঢোকার সাক্ষী হতে পেরে বাঁধ মানছিল না আবেগ, মানছে নবম শ্রেণির ছাত্রী। শুক্রবার সাড়ে ১০টা নাগাদ ইসরো-র ‘স্যাটেলাইট সেন্টার’-এ ঢোকে বর্ধমান শহরের পীরবাহারামের বাসিন্দা ওই কিশোরী। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা প্রায় সমবয়সীদের সঙ্গে আলাপ, পছন্দের বিষয় নিয়ে কথাবার্তা, ইসরো-র সঙ্গে নানা ভাবে যুক্ত বিজ্ঞানীদের সঙ্গে একটুআধটু কথাবার্তাতেই কেটে যায় গোটা দিন।
রাতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা চন্দ্রযান-২-এর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ইসরো-র ‘স্পেস থিয়েটারে’ বসে সে অভিজ্ঞতার শরিক হতে চলেছে দেশের ৬০ পড়ুয়া। গলসির বেলগ্রামের একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রী ইউসরাও তাদের এক জন। ইউসরা বলে, “রাত ৯টা নাগাদ স্পেস থিয়েটারে ঢুকতে পারব। এত দিন সব ছবিতে দেখেছি। সামনাসামনি দেখে কেমন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। স্বপ্নের মতো লাগছে!’’
তিন মেয়ের মধ্যে ছোট ইউসরার সঙ্গে রয়েছেন তার বাবা, একটি সাবান কারখানার মালিক হাসিব আলম। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে স্পেস থিয়েটারে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে। নানা রকম প্রশ্ন করছে। মন দিয়ে সব কিছু দেখছে, উপভোগ করছে।’’
হাসিব জানান, দেশ জুড়ে বিভিন্ন স্কুলে চন্দ্রযান নিয়ে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের একটি পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে প্রচার করেছিল ইসরো। স্কুল থেকেই ইউসরা জানতে পারে পরীক্ষার কথা। ১০ মিনিটের মধ্যে ২০টি প্রশ্নের ‘অনলাইন’-এ উত্তর দিতে হয়। ৩০ অগস্ট ইসরো-র সদর দফতর থেকে ই-মেল আসে সাফল্যের কথা জানিয়ে। মেয়ে-বাবার যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার খরচও দিচ্ছে ইসরো।
ইউসরা জানায়, সকাল ৯টার পরে দেশের অন্য পডুয়াদের সঙ্গে আলাপের সুযোগ মেলে। ইসরো-র ক্যাম্পাসে ঘোরা, খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে অভিযানের খুঁটিনাটি জানিয়ে কিছু পুস্তিকা, ‘স্পেস কুইজ় উইনার, চন্দ্রযান-২’ লেখা সাদা টি-শার্ট, টুপি দেওয়া হয়। হিজাবের সঙ্গে ওই টুপি পরেই ঘোরাফেরা করেছে সে। বড় হয়ে মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছে রয়েছে ইউসরার। ইসরো ঘুরে দেখে মেয়ের সে ইচ্ছে আরও বাড়বে বলে মনে করছেন হাসিব।
ইউসরার সাফল্যে গর্বিত পড়শিরাও। তাঁদেরই এক জন মির্জা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বেগ বলেন, “এলাকার মুখ উজ্জ্বল করল মেয়েটা।’’