প্রতীকী ছবি।
‘দুষ্টের ছলের অভাব হয় না’! মহারাষ্ট্র, কেরল, কর্নাটকে করোনার বর্তমান পরিস্থিতি দেখে, বাংলার মানুষের অন্তত এই প্রবাদ বাক্য মনে করা উচিত বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, বঙ্গে সংক্রমণের হার, মৃতের সংখ্যা কম দেখে উচ্ছ্বাসের কারণ নেই। বিভিন্ন রাজ্যে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে স্পষ্ট যে, মানব শরীরে হানা দিতে কোভিড-১৯ ভাইরাস চারিত্রিক পরিবর্তন শুরু করেছে। এ রাজ্যেও করোনার দ্বিতীয় দাপট (সেকেন্ড ওয়েভ) আসবে না, সেটা কেউ বলতে পারছেন না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, সমস্ত অতিমারিতেই দ্বিতীয় ঢেউ আসে। প্রথম পর্বের পরে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করে। কখনও শূন্য হয়ে যায়। তার অর্থ এই নয় যে, সেটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। শ্বাসতন্ত্রের উপরে সংক্রমণ ছড়ায় যে সমস্ত ভাইরাস, নিষ্ক্রিয় থাকায় সময়ে সেগুলিতে ‘মিউটেশন’ হয়। তিনি বলেন, ‘‘সংক্রমণের হার কমছে দেখে মানুষেরও গা ছাড়া মনোভাব তৈরি হয়। মিউটেটেড এবং শক্তিশালী ভাইরাস ফিরে এসে সেই সুযোগকেই কাজে লাগায়। প্রতিষেধক নেওয়ার প্রক্রিয়াকেও দ্রুত করতে হবে।’’ গত এক সপ্তাহে রাজ্যে করোনা সংক্রমণের রেখাচিত্র ওঠানামা করছে। কোনও দিন আক্রান্তের সংখ্যা ১৯০, তো পরের দিন ১৩৩। আবার তার তিন দিন পরেই সেই সংখ্যা ১৯৪।
রাজ্যের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের উপদেষ্টা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী বলছেন, ‘‘আগের বার মহারাষ্ট্র, দিল্লির পরেই কিন্তু বঙ্গে ঢেউ লেগেছিল। আবারও মহারাষ্ট্র, কেরলে করোনার প্রভাব বাড়ছে। ফের রাজ্যেও ঢেউ উঠতেই পারে। কারণ, ওই সমস্ত জায়গায় যাতায়াতের পথ খোলা রয়েছে।’’ জানুয়ারি থেকে সামাজিক অনুষ্ঠানে জমায়েতের সংখ্যা বেড়েছে। কয়েকটি বিয়ের অনুষ্ঠানের পরে দেখা গিয়েছে, সেখানে ১০-১২ করে সংক্রমিত হয়েছেন। এক জনের মৃত্যুও হয়েছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, ‘‘গত মার্চ-এপ্রিলে কলকাতায় সংক্রমণ কম থাকলেও, মে-র মাঝামাঝি থেকে বাড়তে শুরু করে। যে ভাবে সামাজিক জমায়েত বেড়েছে, তাতে দ্বিতীয় ঢেউ আসতেই পারে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, অনেকে পরীক্ষা না সংক্রমিতের সংখ্যাও জানা যাচ্ছে না। ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি’ (আইআইসিবি) –এর গবেষক ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কম মাত্রায় সংক্রমণ চলতেই থাকবে। তবে নতুন স্ট্রেন এলে দ্বিতীয় ঢেউ আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেনও দেশে ঢুকেছে। যে বিমানে ওই সংক্রমিতেরা এসেছেন, তাতে যে অন্য কাউকে সংক্রমণ ছড়াননি কিংবা তা কমিউনিটিতে যায়নি, সেটা বোঝা সম্ভব হচ্ছে না।’’