বিপজ্জনক: বারাসত হাসপাতালে মাস্ক না পরেই ঘুরছেন রোগীর পরিজনেরা। ফাইল চিত্র
চিকিৎসকের সংস্পর্শে আসা রোগীর পরিবারের সদস্যেরা মাস্ক পরেননি। সেই কারণে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে করোনা-আবহে ‘এক্সপোজ়ার’-এর পাশাপাশি চিকিৎসকদের সংক্রমিত হওয়ার অন্যতম সম্ভাব্য কারণ হিসেবে এই তথ্যও উঠে এসেছে মুম্বইয়ের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়।
কোভিড সংক্রমণের ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে শীর্ষে মহারাষ্ট্র। সেখানে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। যাঁদের মধ্যে চিকিৎসকেরাও রয়েছেন। মুম্বইয়ের ওই সমীক্ষার পরে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে যত জন চিকিৎসক সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি কাজ করছে কি?
মুম্বইয়ের ২৪-৭২ বছরের ১৭৬ জন সংক্রমিত চিকিৎসককে নিয়ে ওই সমীক্ষা করেছে ‘অ্যাসোসিয়েশন অব মেডিক্যাল কনসালট্যান্টস, মুম্বই’ (এএমসি)। ওই চিকিৎসকদের মধ্যে ২০-৩৫ বছর বয়সির সংখ্যা ছিল ২৯ জন, ৩৬-৫০ বছর বয়সি ৭০ জন, ৫১-৬০ বছর বয়সি ছিলেন ৫৪ জন এবং ৬১-৮০ বছর বয়সি ২৩ জন। এএমসি-র প্রেসিডেন্ট দীপক বেদ বলেন, ‘‘উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ৩৬-৫০ বছর বয়সি মোট চিকিৎসকের ৪০ শতাংশই সংক্রমিত হয়েছেন। অর্থাৎ কর্মক্ষম জনসংখ্যাই (ওয়ার্কিং পপুলেশন) যে বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন, চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেও তা দেখা যাচ্ছে।’’
তবে কোভিড ১৯ কেন্দ্রের চিকিৎসকের তুলনায় সাধারণ চিকিৎসাকেন্দ্রের ডাক্তার বেশি সংক্রমিত হয়েছেন। প্রাইভেট ক্লিনিক বা নন-কোভিড হাসপাতালে রোগী দেখার সময়ে তাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কোভিড কেন্দ্রে সংক্রমিতের সংখ্যা যেখানে ৩৫ জন, সেখানে সাধারণ চিকিৎসাকেন্দ্র বা ক্লিনিকে কর্মরত ১৪১ জন চিকিৎসক সংক্রমিত হয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি প্রায় ৫১.৭ শতাংশ চিকিৎসক অত্যধিক দুর্বল বোধ করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বক্ষরোগ চিকিৎসক রাজা ধর বলছেন, ‘‘কোভিড কেন্দ্রের সুরক্ষা সাধারণ হাসপাতালের তুলনায় ভাল। তা ছাড়া কোভিড কেন্দ্রে আপনি বাড়তি সতর্ক থাকবেন, সুরক্ষা-বিধি মেনে চলবেন। কিন্তু সাধারণ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সেই সতর্কতা থাকে না। তাই সংক্রমণও বেশি।’’
সমীক্ষা অনুযায়ী, বিসিজি (যক্ষ্মা, মেনিনজাইটিস) এবং এমএমআর (মিজ়লস, মামস, রুবেলা) প্রতিষেধক নেওয়া সত্ত্বেও ৯৭ জন চিকিৎসক সংক্রমিত হয়েছেন। দীপক বেদের কথায়, ‘‘এক সময়ে বিসিজি প্রতিষেধক নেওয়া থাকলে তা করোনার বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ গড়তে পারে বলা হচ্ছিল। বাস্তবে অন্য প্রতিষেধক যে করোনার ক্ষেত্রে কাজ করে না, সমীক্ষা সেটাই দেখিয়েছে।’’
সমীক্ষা এও জানাচ্ছে, মাস্কের ভুল ব্যবহারের জন্য সংক্রমিত হয়েছেন সাত চিকিৎসক! আবার কর্মক্ষেত্রে মাস্ক না পরার জন্য সংক্রমিত হয়েছেন আরও সাত জন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি চিকিৎসকদের একাংশের মধ্যেই নিয়ম পালনে ফাঁক থেকে যাচ্ছে? শল্য চিকিৎসক সুমিত চৌধুরীর বক্তব্য, মাস্ক পরলে তো মুখে হাত দেওয়ার কথা নয়। কিন্তু অসতর্ক মুহূর্তে অনেক চিকিৎসকই সেটা করছেন। সুমিতবাবুর কথায়, ‘‘মাস্কের ভুল ব্যবহার সংক্রমিত হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করি। ফেস শিল্ডও সংক্রমণ আটকাতে সাহায্য করে। মাস্কের পাশাপাশি চিকিৎসকদের সেটাও পরা দরকার।’’
কার্ডিয়োথোরাসিক চিকিৎসক কুণাল সরকার জানাচ্ছেন, সাধারণ মানুষের তুলনায় এক জন চিকিৎসকের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা হাজার গুণ বেশি! সে ক্ষেত্রে যদি মাস্ক ও পিপিই পরার নিয়ম মানা হয়, তা হলে সংক্রমণের আশঙ্কা কম থাকে। কুণালবাবু বলছেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম না মানাটা সংক্রমণের অন্যতম কারণ হতে পারে।’’ ইএনটি চিকিৎসক দুলাল বসুর বক্তব্য, ‘‘চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ১০ শতাংশের মতো। যেখানে সারা ভারতে এই মৃত্যুর হার প্রায় দু’শতাংশ। চিকিৎসকেরা সামনে থেকে লড়ছেন, তাই সংক্রমিত ও মৃতের সংখ্যাও বেশি হচ্ছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে নিয়ম পালন করা ছাড়া বিকল্প পথ নেই!’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)