ছবি: সংগৃহীত।
সরকারি চিকিৎসকদের বদলি-তালিকা ঘিরে ফের অসন্তোষ দানা বাঁধল। গত দু’দিনে রেডিয়োলজি, অর্থোপেডিক, সার্জারি-সহ মোট ছ’টি বিভাগের চিকিৎসকদের বদলির বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। তার পরেই স্বাস্থ্য দফতরের বদলি নীতির সমালোচনায় মুখর হয়েছে চিকিৎসক সংগঠনগুলি।
সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আঞ্চলিক ক্যানসার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজ চলছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ক্যানসার চিকিৎসক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়কে মাস দুয়েক আগে ‘ডিটেলমেন্টে’ সাগর দত্তের রেডিয়োলজি বিভাগে আনা হয়েছিল। পদোন্নতির পরে প্রফেসর পদমর্যাদার সেই চিকিৎসককে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। সাগর দত্তে যোগ দিয়ে ‘ডে-কেয়ার’ চালু করেন সুব্রতবাবু। সেই পরিষেবা সাড়া ফেলেছে।
আঞ্চলিক ক্যানসার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ প্রকল্পের ‘নোডাল অফিসার’ ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নীলাদ্রি রায়। তিনিও বদলি হয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। পরিবর্তে এক জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এবং এক জন টিউটর পদমর্যাদার চিকিৎসক যোগ দেবেন সাগর দত্তে। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, ক্যানসার প্রতিষ্ঠানের জন্য ভবন তৈরির কাজ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। প্রায় ৪৫ কোটি টাকার প্রকল্পে আপাতত পাঁচতলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। রেডিয়েশন সেন্টার, মেডিক্যাল অঙ্কোলজি, সার্জিক্যাল অঙ্কোলজি, হেমাটোলজি, অঙ্কো প্যাথলজির পাশাপাশি শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসায় এই প্রকল্প ঘিরে প্রত্যাশা প্রচুর।
আরও পড়ুন: করোনা-আতঙ্কে চিনে ঘরবন্দি সুন্দরবনের ছাত্র
এই অবস্থায় দুই চিকিৎসকের বদলিতে ওই প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষা হাসি দাশগুপ্ত অবশ্য বলেন, ‘‘দুই চিকিৎসকের পাশাপাশি আরও দু’জন এলে ভাল হত ঠিকই।
কিন্তু অন্য মেডিক্যাল কলেজেও তাঁদের প্রয়োজন রয়েছে। যাঁরা আসছেন, ওই প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁরাও ভাল কাজ করবেন। ডে-কেয়ার যেমন চলছে, তেমনই চলবে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’
দু’দিনের বদলি-তালিকা ঘিরে অসন্তোষের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে স্বজনপোষণের অভিযোগ। চিকিৎসক সংগঠনগুলির বক্তব্য, কোলোন আলসারে আক্রান্ত নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের রেডিয়োথেরাপি বিভাগের চিকিৎসক তাপস দাসকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে বদলির সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য দফতরের পুনর্বিবেচনা করা উচিত। দীর্ঘ সাত বছর উত্তরবঙ্গে কাজ করার পরে এনআরএসের অস্থি বিভাগের চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন পুনরায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরসের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা। তাঁর কথায়, ‘‘নিয়ম মেনে বদলি হলে আপত্তি নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে যে-সব চিকিৎসক জেলায় কাজ করছেন, তাঁদের ফের অন্য জেলায় পাঠানো হচ্ছে। আবার অতীতে জেলায় কাজ করার
পরে যাঁরা কলকাতায় ফিরেছেন, তাঁদের অল্প সময়ের ব্যবধানে জেলায় পাঠানো হয়েছে। এতে চিকিৎসকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।’’ সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের আশঙ্কা, ‘‘এ ভাবে চলতে থাকলে চিকিৎসকদের মন ভেঙে যাবে। বদলি-নীতিতে স্বচ্ছতা বজায় না-রাখলে সেটা আখেরে স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরে প্রভাব ফেলবে।’’