প্রতি বছর কালীপুজো এবং দীপাবলির পর বাতাসে দূষণের মাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। প্রতীকী ছবি।
আসন্ন কালীপুজো এবং দীপাবলিতে বাজি বিক্রি ও পোড়ানো নিষিদ্ধ করা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানালেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, এই রায়ের জেরে আলোর উৎসব চলাকালীন পরিবেশ দূষণ কমবে। রেহাই পাবেন কোভিডে আক্রান্ত এবং হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগা রোগীরা।
চিকিৎসক মহলের পাশাপাশি আদালতের রায়ে স্বস্তি পেয়েছেন পরিবেশবিদরাও। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর কালীপুজো এবং দীপাবলির পর বাতাসে দূষণের মাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। বায়ু দূষণের পাশাপাশি শব্দ দূষণও হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আলোর উৎসবে দূষণের জেরে হাঁপানি, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি এবং শ্বাসকষ্টের রোগীদের সমস্যাও বাড়ে। ফলে কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বাজি পোড়ানো থেকে বিরত থাকাই ভাল বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সুপার আশিস মান্নার মতে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মতো সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও দূষণ সমান ক্ষতিকারক। বাজি পোড়ানোর ফলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে, সেই তুলনায় সুক্ষ্ম ধূলিকণা এবং রাসায়নিকের পরিমাণ বাড়ে বলে জানান আশিস। তিনি বলেন, “বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কোভিড রোগীই গুরুতর অসুস্থ। এখন যাঁরা কোভিডে সংক্রমিত শুধু তাঁরাই নন, কোভিড থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও ‘লং কোভিড’-এ আক্রান্তদের অনেকেই ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন। তাঁদের ক্ষেত্রেও দূষিত বায়ু মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।”
শীতের আগে এই মরসুমে সাধারণত শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তার উপর বাজি পোড়ানোর ফলে হঠাৎ বায়ু দূষণ বেড়ে যায়। ফুসফুস বিশেষজ্ঞ সুস্মিতা রায়চৌধুরী বলেন, “চিকিৎসক এবং ফুসফুস বিশেষজ্ঞ হিসাবে আমি আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। দূষণের ফলে এ সময় হাসপাতালে শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। সমস্যা এতটাই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছয় যে, অনেককে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত হতে হয়। শুধু পরিবেশ নয়, সাধারণ মানুষও এই রায়ের ফলে সুফল পাবেন। এই মুহূর্তে কোভিড এবং হাঁপানি, দুইয়েরই খাঁড়া ঝুলছে আমাদের উপর। নতুন করে বায়ু দূষণ করে রোগীদের সমস্যা না বাড়ানোই ভাল।”
সুস্মিতার সঙ্গে একমত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দোলুই। তাঁর মতে, বায়ু দূষণের ফলে কমবেশি সবাইকেই ভুগতে হয়। অনির্বাণ জানান, বায়ু দূষণের ফলে বাতাসে পিএম ২.৫ এবং ১০— দু’টির মাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। ফলে সুক্ষ্ম দূষিত কণা প্রশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসের মধ্যে চলে যায়। এবং তা চিরস্থায়ী ক্ষতি করতে সক্ষম হয়। অনির্বাণের কথায়, “মনে রাখতে হবে যে, দূষণের জেরে মৃদু উপসর্গযুক্ত কোভিড রোগীদেরও ফুসফুসের ক্ষতি হওয়ার উদাহরণ রয়েছে। আর কোভিডে গুরুতর অসুস্থদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। কোভিডের পরিসংখ্যান দেখে এ বার বাজি পোড়ানো থেকে বিরত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাতে কোভিড রোগীদের কিছুটা রেহাই মিলবে।’’