ফাইল চিত্র।
খাস কলকাতায় বাজি ও মাইকের দূষণ রুখতে নজরদারি আছে। কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন জেলা শহরে কি কালীপুজো ও দেওয়ালিতে এই উপদ্রব রুখতে পারবে প্রশাসন? বিভিন্ন জেলা শহরে উৎসবের বহর যে ভাবে বাড়ছে, তাতে এই প্রশ্ন জোরালো ভাবে তুলছেন পরিবেশকর্মীদের অনেকে। তবে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং রাজ্য পুলিশের দাবি, জেলাগুলিতেও আগের বছরের তুলনায় এ বার নজরদারি বাড়ছে।
শব্দবাজির দাপটে কিছুটা রাশ টানা গেলেও গত কয়েক বছরে আতসবাজির দূষণ মারাত্মক হয়ে উঠেছে। গত বছর কালীপুজো ও দেওয়ালির দিনে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বায়ুদূষণ সংক্রান্ত তথ্যে নজর রাখলেও কলকাতা ছাড়া জেলা শহরগুলিতেও তা দেখা যাচ্ছে। শিলিগুড়িতে বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণার মাত্রা ৩০০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত উঠেছিল। আসানসোলের ক্ষেত্রেও তা ৩০০-র বেশি ছিল। অর্থাৎ মারাত্মক দূষণ। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, দূষণের নিরিখে অন্যান্য ছোট শহরও কম যায়নি। শব্দের দাপটও (বিশেষ করে ডিজে বক্স) মারাত্মক ছিল। এ বছরও কালীপুজোর আগে থেকেই জেলা এবং শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় সেই দাপট শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে বাজি ফাটাতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশ সব জায়গায় মানা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা জানাচ্ছেন, এ বছর জেলা শহরগুলিতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে সব জায়গায় কর্মীদের পাঠানোর মতো লোকবল ও পরিকাঠামো পর্ষদের নেই। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের উপরেই ভরসা করতে হচ্ছে। পর্ষদের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্য পুলিশের ডিজি-র এক জন প্রতিনিধি এ ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করছেন। তাঁর মাধ্যমে জেলার এসপি-দের কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। এর পাশাপাশি আমাদের ৭টি আঞ্চলিক অফিস কাজ করবে। আমরা জেলা থেকে অভিযোগ পেলে তা পুলিশকে জানাব।’’
রাজ্য পুলিশের বক্তব্য, বিভিন্ন জেলায় তারা ইতিমধ্যেই সচেতনতা প্রসার করেছে। উত্তরবঙ্গে বাজি পরীক্ষা করে নিষিদ্ধ বাজি চিহ্নিত
করা হয়েছে। সেই বাজি যাতে নাগরিকেরা না-কেনেন তা-ও বলা হচ্ছে। তবে ডিজে বক্সের দাপট আদৌ কতটা ঠেকানো যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পুলিশের অনেকেরই। তাঁদের মতে, বিসর্জনে ডিজে বক্স আটকাতে গেলে পুজো কমিটির লোকেরা গোলমাল বাধাবে। তার জেরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, এই আশঙ্কা করে ছাড় দেওয়া হয়। সেই সুযোগ নেন পুজো উদ্যোক্তারা।
পরিবেশকর্মীদের যৌথ সংগঠন সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত জানান, তাঁরাও বিভিন্ন জেলায় সচেতনতা প্রসার করছেন। এর পাশাপাশি হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। গত বছর হাওড়া থেকে সব থেকে বেশি অভিযোগ মিলেছিল। তাই এ বার হাওড়ায় পৃথক কন্ট্রোল রুম এবং শব্দ ও বায়ুদূষণ পরিমাপক যন্ত্র বসানো হচ্ছে।
এ বছর অবশ্য কালীপুজোর আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে জোরালো বৃষ্টি হওয়ায় বাতাসের দূষিত কণা অনেকটাই ধুয়ে গিয়েছে। তার ফলে সব জায়গাতেই বাতাস পরিস্রুত। গত বছর যা ছিল না। আলোর উৎসব এই পরিষ্কার বাতাসকে ফের দূষিত করে কি না, সেটাই দেখার।