midnapore

বাঁধরক্ষায় প্রাণপণ, তৈরি ত্রাণ শিবিরও

ঝড়ে আম, কলা-সহ ফল, আনাজ নষ্ট হতে পারে। তাই সময়ের আগেই কেটে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন চাষিরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২১ ০৫:৩৩
Share:

ফাইল চিত্র।

পাক্কা এক বছর আগে ‘আমপান’- এর ক্ষত এখনও পুরোপুরি মেলায়নি। এ বছর ধেয়ে আসছে ‘ইয়াস’। এই ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় আগে থেকেই সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই
মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসন।

Advertisement

আগামী মঙ্গলও বুধবার মূলত রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকাতেই ‘ইয়াস’ আছড়ে পড়ার কথা। সেই মতো পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল এলাকায় যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রাখছে প্রশাসন। উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে দুর্বল নদীবাঁধের সংস্কার শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে এনে রাখতে ফ্লাড শেল্টারগুলিকে স্যানিটাইজ় করে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি একাধিক স্কুলভবনকে তৈরি রাখা হচ্ছে ত্রাণ শিবির হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের দ্রুত ফিরতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে মাছ ধরতে নদী বা সমুদ্রে যাওয়ার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ঝড়ের আগাম খবরে আতঙ্কিত কৃষকেরা।

ঝড়ে আম, কলা-সহ ফল, আনাজ নষ্ট হতে পারে। তাই সময়ের আগেই কেটে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন চাষিরা। আমপানে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় বিভিন্ন দিনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এবার তাই আগেই বিদ্যুৎসংস্থাগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। ঝড়ের পর বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে দ্রুত পানীয়, জল শুকনো খাবার পৌঁছে দিতে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক জায়গাতেই বিপজ্জনক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ঝড়ের পর দ্রুত ভাঙা গাছ সরাতে গাছ কাটার
মেশিন প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বিভিন্ন ব্লকে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দুই জেলাতেই আধিকারিকদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement

ইয়াসের ধাক্কায় দিঘা, কাঁথি, খেজুরি, নন্দীগ্রাম ও হলদিয়ার উপকূলবর্তী এলাকায় সমুদ্র ও নদী উত্তাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জলোচ্ছ্বাসের জেরে সমুদ্র ও নদীবাঁধ ভেঙে বিপদেরও আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই সব এলাকাতেও জরুরিকালীন ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতির কাজ চালাচ্ছে সেচ দফতর। জেলার সমুদ্রতীরবর্তী বাঁধ এবং রূপনারায়ণ, হুগলি ও হলদির নদীবাঁধের যে সব অংশ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে, সেই সব জায়গায় জরুরিভিত্তিতে শুক্রবার থেকেই বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করা হয়েছে। আগামী সোমবারের মধ্যে ওই কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন, জেলা সেচ দফতরের আধিকারিক ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতরের আধিকারিকদের সাথে ইতিমধ্যে বৈঠকও করেছেন সেচ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। সৌমেন বলেন, ‘‘দিঘা উপকূলবর্তী এলাকার সমুদ্র বাঁধ-সহ বিভিন্ন নদীর বাঁধের পরিস্থিতির উপর নজরদারির জন্য দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

এদিন দিঘায় মহড়া শুরু করে দেয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। দিঘা সংলগ্ন একাধিক গ্রামে তারা মাইক হাতে সচেতনতা মূলক প্রচার চালায়। করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে এনডিআরএফ কর্মীরা হুডি যুক্ত বিশেষ পোশাক পরে বেরিয়েছিলেন। এ দিন সকাল থেকেই বেরিয়ে পড়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি। সারাদিন ধরে দিঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর এবং কাঁথি-১ ও দেশপ্রাণ ব্লক ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন, ‘‘সমুদ্র বাঁধগুলিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ হচ্ছে। কোথায়, কত বোল্ডার নিয়ে যেতে হবে, কী ভাবে বাঁধ রক্ষা করা হবে সেই সব সরেজমিনে ঘুরে দেখেছি।’’

পশ্চিম মেদিনীপুরেও দাঁতন, মোহনপুর, ঘাটাল প্রভৃতি এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগাম প্রস্তুতিতে ফ্লাড শেল্টার, বাছাই স্কুল ভবনে গড়ে উঠছে ত্রাণ শিবির। জেলায় চালু হয়েছে কন্ট্রোল রুম। ব্লকস্তরেও কন্ট্রোল রুম চালু হচ্ছে। জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আগাম যে সব পদক্ষেপ করার করা হচ্ছে। ত্রাণ শিবির তৈরি হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় মাইকে সতর্কতামূলক প্রচারও চলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement