CPI

CPI: কঠোর বয়স-নীতি, এ বার শোরগোল সিপিআইয়ে 

এমন ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও দলেরই একাংশ মনে করছে, বর্তমান রাজনীতিতে সিপিআইয়ের কোণঠাসা হয়ে পড়ার নানা কারণ আছে। সে সব থেকে নজর ঘুরিয়ে বয়স-নীতি নিয়ে হইচই করা হচ্ছে! প্রশ্নের জেরেই আপাতত উত্তাপ থাকছে সিপিআইয়ে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২২ ০৬:২০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিভিন্ন কমিটিতে বয়স-নীতি বাধ্যতামূলক করার জন্য কান্নুর পার্টি কংগ্রেসে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নিয়েছে সিপিএম। তার আগেই এরিয়া, জেলা ও রাজ্য কমিটিতে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা চালু করেছে তারা। পার্টি কংগ্রেসে একই নীতি কার্যকর হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটিতেও। সিপিএমের চেয়েও কড়া ভাবে এ বার বয়স-নীতি চালু করতে চাইছে সিপিআই এবং তা নিয়েই দলে মাথাচাড়া দিচ্ছে প্রশ্ন ও ক্ষোভ।

Advertisement

অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ায় আগামী ১৪ থেকে ১৮ অক্টোবর হতে চলেছে সিপিআইয়ের ২৪তম পার্টি কংগ্রেস। তার আগে সিপিআইয়ের জাতীয় পরিষদ দলের বিভিন্ন স্তরের কমিটির জন্য বয়স-নীতির খসড়া বিভিন্ন রাজ্যে পাঠিয়েছে আলোচনার জন্য। জাতীয় পরিষদে ওই খসড়া প্রস্তাব পাশ হয়ে গিয়েছিল তেমন কোনও প্রশ্ন ছাড়াই। কিন্তু রাজ্য স্তরে আলোচনা পৌঁছতেই শুরু হয়েছে বির্তক। বাংলার চেয়েও এ ক্ষেত্রে বেশি শোরগোল কেরলে। দক্ষিণী ওই রাজ্যে সিপিআইয়ের কিছু নেতা এই ভাবে বয়স-নীতি চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি তুলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছেন।

সিপিএমের ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কমিটিতে থাকার ঊর্ধ্বসীমা। কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৭৫, রাজ্য কমিটিতেও ৭৫-এর মধ্যে (বাংলায় যা ৭২) এবং জেলা কমিটিতে ৭০। সিপিআইয়ের প্রস্তাবিত বয়স-নীতিতে আরও বেশি কড়া শর্ত রয়েছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, জাতীয় ও রাজ্য পরিষদে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা হবে ৭৫। জেলা ও তার নীচের কমিটিতে ৬৫। কিন্তু এই সব কমিটিতেই ৫০%সদস্যের বয়স হতে হবে ৪০-এর মধ্যে। সিপিআইয়ে সহকারী সম্পাদকের পদ রয়েছে। প্রস্তাবিত নীতিতে বলা হয়েছে, রাজ্য স্তরে দু’জন সহকারী সম্পাদক থাকলে এক জনের বয়স ৬৫ ও অন্য জনের ৫০-এর মধ্যে হতে হবে। একই ভাবে জেলায় সহকারী সম্পাদকদের বয়স এক জনের ক্ষেত্রে ৬০-এর মধ্যে ও অপর জনের ৪০-এর মধ্যে থাকতে হবে। এই রকম ভাবে বয়সের মাপকাঠি মেনে কমিটি গড়া বাস্তবিক সম্ভব কি না, তা-ই নিয়েই প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরে।

Advertisement

সূত্রের খবর, কেরলে রাজ্য পরিষদের বৈঠকে এই বয়স-নীতি নিয়ে আলোচনার সময়ে বিরোধিতায় সরব হয়েছেন নেতাদের বড় অংশই। তাঁদের বক্তব্য, ৪০ বছর বয়সের মধ্যে কমিটির ৫০% সদস্য ঠিক করা কী ভাবে সম্ভব! বয়স দেখে ধরে ধরে কমিটিতে নিয়ে এলে বামপন্থী সংগঠনের এত দিনের ভাবনা বা ধারণাকেই অস্বীকার করতে হয়! পার্টি কংগ্রেসে যাওয়ার আগেই বিশদে আলোচনা করে সব দিক ভেবেচিন্তে তাঁরা গঠনতন্ত্র সংশোধনের পক্ষপাতী।

কেরল সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক কানম রাজেন্দ্রন অবশ্য বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, সংসদীয় ব্যবস্থায় দল এখন এই প্রথাই মেনে চলে। সংগঠনের ক্ষেত্রেও সেই নীতি মানতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। নতুন রক্ত সঞ্চার হলে তবেই সংগঠন গতিশীল থাকবে। রাজ্যের প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী ভি এস সুনীল কুমার বয়স-নীতি নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন তুলেছিলেন। রাজেন্দ্রন পাল্টা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, অনেক বার যাঁরা ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিরস্ত করায় সুনীল টিকিট পেয়েছিলেন। আবার মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলেই মন্ত্রিত্বে সুযোগ পেয়েছিলেন। এই ভাবেই দলকে এগোতে হয়।

এমন ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও দলেরই একাংশ মনে করছে, বর্তমান রাজনীতিতে সিপিআইয়ের কোণঠাসা হয়ে পড়ার নানা কারণ আছে। সে সব থেকে নজর ঘুরিয়ে বয়স-নীতি নিয়ে হইচই করা হচ্ছে! প্রশ্নের জেরেই আপাতত উত্তাপ থাকছে সিপিআইয়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement