অর্থনীতির পরে এ বার পরিবেশ নিয়ে আলোচনাসভার আয়োজন করল বিশ্বভারতীর অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ। শনিবার ‘প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবেশ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ওই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সূচনা হয়। উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখলেন চিপকো আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া গাঁধীবাদী পরিবেশকর্মী চণ্ডীপ্রসাদ ভাট। চিপকো আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরিবেশ রক্ষায় হিমালয়ের ভূমিকা এবং উন্নয়নের ফলে হিমালয়ের সমস্যা নিয়ে এ দিন বক্তব্য রাখেন তিনি। আজ, রবিবার এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষ হবে।
গত রবিবারই অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে প্রথম অশোক রুদ্র স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়েছিল। নবনির্মিত বাংলাদেশ ভবন প্রেক্ষাগৃহে হওয়া এই স্মারক বক্তৃতায় বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। ‘ন্যূনতম আর্থিক সুরক্ষার অধিকার’ বিষয়টি নিয়ে প্রণববাবুর বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন আয়োজক বিভাগের ছাত্রছাত্রী ও গবেষক পড়ুয়া থেকে শুরু করে বিশ্বভারতীর অন্য বিভাগের অধ্যাপক, কর্মী, পড়ুয়ারাও।
এ বার এই একই বিভাগের উদ্যোগে আরও একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হওয়ায় পড়ুয়ারা খুশি। এ দিন সম্মেলনের উদ্বোধন করেন পদ্মভূষণ প্রাপ্ত চণ্ডীপ্রসাদ ভাট। মুখ্য পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। এ ছাড়াও ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদ্যাভবনের অধ্যক্ষ আশা মুখোপাধ্যায়। সম্মেলনের ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর সৌম্যদীপ চট্টোপাধ্যায় জানান, ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে গবেষক পড়ুয়া, অধ্যাপক-সহ ৩৫ জন দু’দিনের এই সম্মেলনে বিষয়ের উপরে তাঁদের গবেষণাপত্র পাঠ করবেন।
চণ্ডীপ্রসাদ জানান, পরিবেশ রক্ষায় হিমালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে খুব বেশি মানুষের চাপ হিমালয় নিতে পারবে না। এর ফলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় হতে পারে। সে ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য আগে থেকে ভূপ্রাকৃতিক এবং পরিবেশগত বিষয়গুলির উপর জোর দিতে হবে। যে উন্নয়নের ফলে হিমালয়ের সমস্যা হতে পারে বলে মনে হবে, তেমন উন্নয়ন থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন এই পরিবেশকর্মী। ভারতীয় উপমহাদেশের জলবায়ুর ক্ষেত্রেও হিমালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সুতরাং যে কোনও ধরনের সমস্যা হলে মানুষের উপর তার প্রভাব পড়বে। সুতরাং প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়নের কথা বলেছেন চণ্ডীপ্রসাদ। এই বার্তা শুধুমাত্র হিমালয়ের ক্ষেত্রেই নয়, যে কোনও এলাকার উন্নয়নের ক্ষেত্রেই যে পরিবেশগত বিষয়ের উপরে জোর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, তা বুঝতে পেরেছেন উপস্থিত সকলেই।
আয়োজক বিভাগের প্রধান অপূর্ববাবু জানান, সারা বছরই এই জাতীয় বিভিন্ন আলোচনাসভা, সম্মেলনের আয়োজন করে এই বিভাগ। পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখেই বক্তাদের নির্বাচন করা হয়। তাঁরা যাতে প্রতিটি বিষয় স্পষ্ট ভাবে জানতে পারেন, তাই অধ্যাপকদের পাশাপাশি বিষয়গুলি নিয়ে যাঁরা সরাসরি কাজ করছেন, তাঁদের মুখ থেকেই অভিজ্ঞতা শোনার ব্যবস্থা করা হয়। কৃষি, পরিবেশ এবং গ্রামোন্নয়ন এই বিষয়গুলির উপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় কর্মশালা করা হয়।
এ বারই প্রথম ‘অশোক রুদ্র স্মারক বক্তৃতা’র আয়োজন করেছিল এই বিভাগ। এর পর থেকে প্রতিবারই এই স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হবে বলেও জানান অপূর্ববাবু। ছাত্রছাত্রীরাও এর ফলে উৎসাহী হচ্ছেন বলে তাঁর বিশ্বাস। এ দিনের সম্মেলনে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল। বিশ্বভারতীর সঙ্গীতভবনের পাশাপাশি বোলপুরের স্থানীয় দল ‘বোলপুর নৃত্যনিকেতন ডান্স গ্রুপ অ্যান্ড স্কুল’ কাঠিনৃত্য পরিবেশন করে। এই দলটির প্রশিক্ষক অভিষেক দত্ত বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীতে এমন সুযোগ পাব ভাবিনি। এ বছর মেলায় বিনোদন মঞ্চে আমাদের অনুষ্ঠান দেখে খুশি হয়েই উপাচার্য আমাদের এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বলেছিলেন। আমাদের দলের ছোটরাও খুব খুশি।’’