দীপক সরকার। —ফাইল চিত্র।
মাস তিনেক আগে দলের জেলা সম্পাদকের পদ ছাড়তে হয়েছিল। এ বার সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকেও বাদ পড়লেন দীপক সরকার। দীপকবাবু দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। দলের এক সূত্রে খবর, রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ ছিল, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা আর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে থাকতে পারবেন না। সেই মতোই জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে সরে যেতে হল দীপকবাবুকে।
রবিবার মেদিনীপুরে সিপিএমের জেলা কমিটির বৈঠক থেকে নতুন সম্পাদকমণ্ডলী গঠন করা হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মদন ঘোষ। নতুন কমিটিতে অবশ্য বিশেষ চমক নেই। চমক আনার ঝুঁকিও নিতে চাননি নেতৃত্ব। বরং বিধানসভা ভোটের আগে স্থিতাবস্থা বজায় রাখারই চেষ্টা হয়েছে। নতুন মুখ বলতে দু’টি। নারায়ণগড়ের অনিল পাত্র আর ঝাড়গ্রামের প্রদীপ সরকার। আগে ১৬ জনের সম্পাদকমণ্ডলী ছিল। এ বারও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা ১৬। আগের কমিটি থেকে হরেকৃষ্ণ জানা শারীরিক কারণে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আর বাদ গিয়েছেন দীপকবাবু।
জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদ পড়ার পর কী বলছেন দীপকবাবু? তাঁর কথায়, “এখন রাজ্য কেন্দ্রে (আলিমুদ্দিন) গিয়ে কাজ করতে হবে। এটা একটা প্রক্রিয়া। রাজ্য কমিটির নির্দেশ রয়েছে সব রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যকেই রাজ্য কেন্দ্রিক কাজ করতে হবে।’’ একদা ‘দীপক-বিরোধী’ বলে পরিচিত তরুণ রায় এখন সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক। দীপকবাবুকে সরিয়েই এই পদে এসেছেন তিনি। এ দিন বৈঠকের পর তরুণবাবু বলেন, “দীপকবাবু দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। কেন্দ্রীয় ভাবে কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। তাই তিনি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে থাকলেন না। শুধু এই জেলায় নয়, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা কেউই জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে থাকছেন না।’’
সিকি শতকের ইনিংস শেষে গত ফেব্রুয়ারিতে জেলা সম্মেলনে দীপকবাবু জেলা সম্পাদকের পদ থেকে সরে যান। এরপর থেকেই জেলায় দীপক-অনুগামীদের ক্ষমতা খর্ব হতে শুরু করে। এখনও অবশ্য সংগঠনে বড় ধরনের কোনও ঝাঁকুনি আনেনি তরুণ-শিবির। আগের কমিটি যেহেতু সে ভাবে নাড়াচাড়া হয়নি, তাই এ বারও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে থেকে গেলেন সুশান্ত ঘোষ, হরেকৃষ্ণ সামন্ত, ডহরেশ্বর সেন, বিজয় পাল, সত্যেন মাইতিরা। গত বার যে চার জন কমিটিতে এসেছেন, সেই পুলিনবিহারী বাস্কে, মেঘনাদ ভুঁইয়া, অশোক সাঁতরা, সমর মুখোপাধ্যায়ও জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে রয়েছেন। দলের একাংশ মনে করেছিল, নতুন সম্পাদকমণ্ডলীতে চমক থাকবে। নতুন মুখের সংখ্যা অন্তত চার হবে। প্রবীণদের মধ্যে অন্তত চারজনকে ছেঁটে ফেলা হবে। বেলা গড়াতেই অবশ্য দলের ওই অংশ বুঝে যায়, তাদের ভাবনা অমূলক। বৈঠকে কেউই নতুন সম্পাদকমণ্ডলীর বিরোধিতা করেননি। সর্বসম্মতিক্রমে নতুন সম্পাদকমণ্ডলী গঠন হয়। সিপিএমের এক জেলা নেতা বলছেন, “সামনে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে স্থিতাবস্থা বজায় রাখা জরুরি। দলের সবস্তরে সেই চেষ্টাই হচ্ছে!”
জেলা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের যে নতুন জেলা কমিটি গঠন হয়েছিল, সেখানে অবশ্য ঝুঁকি নিয়েছিলেন নেতৃত্ব। এক ধাক্কায় ২০ জনকে জেলা কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। বদলে নতুন মুখ হিসেবে ২২ জন জেলা কমিটিতে আসেন। জায়গা পান ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক দিলীপ সাউ, প্রাক্তন যুব নেতা সুদীপ্ত সরকার, এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডা প্রমুখ। দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ মেনেই তরুণ যোগ্য নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কমিটিতে রেখে দেওয়া হয় জেলবন্দি অনুজ পাণ্ডে, ফুল্লরা মণ্ডল, একাধিক মামলায় জড়িয়ে জামিনে মুক্ত তপন ঘোষ, সুকুর আলিকেও।