(বাঁ দিকে) জে পি নড্ডা। দীনেশ ত্রিবেদী (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
রাজ্যসভা ভোট নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরে আলাপ-আলোচনার মধ্যেই দিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার সঙ্গে দেখা করলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা দীনেশ ত্রিবেদী। যিনি আপাতত বিজেপিতে আছেন। কিন্তু ইদানীং রাজনীতিতে বিশেষ ‘সক্রিয়’ নেই। আগামী ২৪ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের সাতটি আসনে রাজ্যসভার নির্বাচন। যার মধ্যে একটি আসন বিরোধী বিজেপির পাওয়া নিশ্চিত। সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে শাসক তৃণমূলের মতোই বিরোধী বিজেপি শিবিরেও আলোচনা শুরু হয়েছে।
এমন জল্পনার আবহে বুধবার দিল্লিতে নড্ডা-দীনেশ সাক্ষাৎ ঘিরে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, দীনেশের রাজ্যসভায় বিজেপির প্রার্থী হতে পারেন। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে এর কোনও সত্যতা মেলেনি। উল্টে বিজেপির নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিজেপি চাইছে কোনও বাঙালিকে রাজ্যসভায় পাঠাতে। কারণ, বিজেপির উপর থেকে এখনও ‘অবাঙালি’ তকমাটি উঠে যায়নি।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে আচমকাই ইস্তফা দেন দীনেশ। তার পর যোগ দেন বিজেপিতে। তার পরে দু’বছরের বেশি কেটে গেলেও বিজেপিতে কোনও রাজনৈতিক পদ পাননি দিনেশ। ‘পদ্ম’ প্রতীকে জনপ্রতিনিধিও হননি। তাই অনেকে মনে করছেন, রাজ্যসভা এবং বাংলার রাজনীতি— দু’টি বিষয় সম্পর্কেই অবহিত দীনেশকে রাজ্যসভায় মনোনয়ন দিতে পারে বিজেপি। সেই কারণেই নড্ডার সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি।
তবে বিজেপির তরফে একাধিক নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছে রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ, অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়েরা। তবু দীনেশকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে জনতা দলের হয়ে গুজরাট থেকে রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন তিনি। পরে তৃণমূলে যোগদান করে ২০০২-২০০৮ পর্যন্ত রাজ্যসভায় ছিলেন। ২০০৯ সালে ব্যারাকপুর লোকসভা থেকে জিতে লোকসভার সদস্য হন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারে যোগদান করলে দীনেশ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হন। মমতা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে দীনেশকে রেলমন্ত্রী করা হয়। কিন্তু ২০১২ সালে রেল বাজেটে ভাড়া বৃদ্ধি ঘটনায় তাঁকে দলনেত্রী মমতার নির্দেশে পদত্যাগ করতে হয়। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটেও ব্যারাকপুর থেকে তৃণমূলের প্রতীকে ফের সাংসদ হন দীনেশ। কিন্তু ২০১৯ সালে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহের কাছে পরাজিত হন। যদিও ২০২০ সালে ফের তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠান মমতা। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই তিনি সেই পদে ইস্তফা দেন। তৃণমূল ছাড়ার ঘোষণাও করেন। সেই বছর বিধানসভা ভোটের আগে যোগ দেন বিজেপিতে।
যদিও বর্তমানে বিজেপির রাজনীতিতে সক্রিয় নন দীনেশ। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে শুরু করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এমন এক জন রাজ্যসভা প্রার্থী চাইছেন, যিনি হবেন ‘ভবিষ্যতের নেতা’। এবং যিনি সাংগঠনিক ভাবেও দলকে সাহায্য করতে পারেন। সে দিক থেকে দীনেশ ‘কাম্য’ নন।
বৃহস্পতিবার থেকেই রাজ্যসভা ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ১৩ জুলাইয়ের মধ্যে মনোনয়ন জমা দিতে হবে প্রার্থীদের। ১৪ তারিখ মনোনয়নের ‘স্ক্রুটিনি’। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ জুলাই। ২৪ তারিখ সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ভোটাভুটি হবে। বিকেল ৫টা থেকে গণনা হয়ে ফলপ্রকাশ হবে। ৬ জুলাইয়ের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে ছ’টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে জয় নিশ্চিত তৃণমূলের। একটিতে জয় পাকা বিজেপি প্রার্থীর। তবে এ বারের রাজ্যসভা নির্বাচনে কোনও ভোট না-হওয়ারই সম্ভাবনা। ছ’জন প্রার্থী ত্রুটিমুক্ত মনোনয়ন জমা দিলেই জয় নিশ্চিত। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া গুজরাটের তিনটি আসন এবং গোয়ার একটি রাজ্যসভার আসনেও নির্বাচন হবে।