দীনেশ বজাজ। —ফাইল চিত্র
একেবারে শেষ মুহূর্তে দৌড়তে দৌড়তে গিয়ে ‘নির্দল’ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক দীনেশ বজাজ। তাতে নাটকীয় মোড় নিয়েছিল এ বারের রাজ্যসভা নির্বাচন। কিন্তু শেষ হাসি হাসা হল না। মনোনয়নপত্রে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের সই ও সিল কিছুই না থাকায় মঙ্গলবার দীনেশের মনোনয়ন বাতিল করে দিয়েছেন রিটার্নিং অফিসার।
দীনেশ বজাজ ও মৌসম বেনজির নূরের মনোনয়ন নিয়ে সোমবার থেকেই আপত্তি তুলছিল বাম ও কংগ্রেস। দীনেশের মনোনয়নে একাধিক গলদ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল ওই দুই রাজনৈতিক দল। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসা মৌসমের মনোনয়ন নিয়ে বাম ও কংগ্রেস শিবিরের আপত্তির কারণ অবশ্য ভিন্ন ছিল। তাদের অভিযোগ, মৌসমের বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা রয়েছে। মনোনয়নপত্রে তিনি তা গোপন করে গিয়েছেন বলেও দাবি দুই বিরোধী দলের। মৌসম মনোনয়নপত্রে নিজের সম্পত্তির সঠিক হিসেব দেননি বলেও অভিযোগ তুলেছিল তারা।
এর পর সোমবার স্ক্রুটিনিতে ধরা পড়ে দীনেশ বজাজ যে হলফনামা জমা দিয়েছেন তাতে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের সই বা সিল কোনওটাই নেই। এ নিয়ে ওই দিন শুনানিও হয়। এ দিন বিকেল চারটেয় ফের শুনানির কথা ছিল। বিধানসভার সচিব রাজ্যসভার এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারও বটে। এ দিন তিনি সব পক্ষকেই জানিয়ে দেন, বিকেল পাঁচটায় শুনানি হবে। সেখানে শেষ পর্যন্ত তিনি বলে দেন, দীনেশ বজাজের ওই অসম্পূর্ণ মনোনয়নপত্র বাতিল করা হচ্ছে। তবে মৌসম নূরের মনোনয়নপত্র গৃহীত হয়।
আরও পড়ুন: করোনা কাঁটা: কাল থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত টালিগঞ্জে সমস্ত শুটিং বাতিল
রাজ্যসভায় বাংলা থেকে শূন্য হওয়া পাঁচ আসনে প্রার্থী ছিল ৬ জন। তাতে ভোটাভুটি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু দীনেশ বজাজের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় এ বার পাঁচ আসনে প্রার্থী পাঁচ জনই। রয়েছেন তৃণমূল সমর্থিত সুব্রত বক্সী, অর্পিতা ঘোষ, মৌসম বেনজির নূর ও দীনেশ ত্রিবেদী। অন্য একটি আসনের জন্য রয়েছেন বাম ও কংগ্রেস সমর্থিত বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। বুধবারের মধ্যে কেউ মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে এই পাঁচ জনই এ রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় যেতে চলেছেন। যদিও মনোনয়ন প্রত্যাহারের সম্ভাবনাও ক্ষীণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচন কমিশন সবুজ সঙ্কেত দিলে বুধবারই ওই পাঁচ জনকে জয়ী ঘোষণা করে তাঁদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হতে পারে।
আরও পড়ুন: কালীঘাট-দক্ষিণেশ্বর-তারাপীঠে ভক্ত নিয়ন্ত্রণ, আরও বিধিনিষেধ চান স্বাস্থ্য কর্তারা
দলীয় শক্তির বিচারে রাজ্যসভায় তৃণমূলের চার প্রার্থীর জয় নিশ্চিত ছিলই। কিন্তু দীনেশ বজাজ ‘নির্দল’ হিসেবে মনোনয়ন জমা দেওয়ায় ভোটাভুটি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ভোট হলে বাম ও কংগ্রেস সমর্থিত বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের মসৃণ ভাবে রাজ্যসভায় যাওয়া একেবারেই সম্ভব হত না। বরং পাল্লা কিছুটা ভারী ছিল দীনেশের দিকেই। এ দিন ভোটাভুটির কাঁটা সরে যেতেই উচ্ছ্বসিত বাম ও কংগ্রেস শিবির। সোমেন মিত্রের কথাতেই সেই উচ্ছ্বাস ধরা পড়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলছেন, ‘‘রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের যৌথ প্রার্থী বিকাশ ভট্টাচার্য নির্বাচিত হওয়ায় আমাদের বাম ও কংগ্রেস জোটের প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হল। সংসদের অভ্যন্তরেও বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই তীব্র হবে।’’