ভাগবত ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি শিলিগুড়িতে এবং ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি বর্ধমানে আরএসএসের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ প্রদেশ থেকে শুরু করে সেখানকার বিভাগ স্তর পর্যন্ত এবং বর্ধমানে মধ্যবঙ্গ প্রদেশ থেকে শুরু করে সেখানকার বিভাগ স্তর পর্যন্ত নেতারা বৈঠকে ছিলেন।
ফাইল চিত্র।
রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক ডামাডোল নিয়ে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের সঙ্গে আলোচনা করলেন দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কেশব ভবনে ভাগবতের সঙ্গে কথা হয় দিলীপ এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের। সেখানে দিলীপ ভাগবতকে রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক পরিস্থিতি জানানোর পাশাপাশি সাংগঠনিক সমস্যার কথাও জানিয়েছেন। দিলীপ শনিবার বলেন, ‘‘বাংলায় দলকে কী করে ঠিক করা যায়, উনি জানতে চাইলেন। আমিও বললাম। উনিও জানেন।’’ তিনি কি বিজেপির সাংগঠনিক সমস্যার কথাও ভাগবতকে জানিয়েছেন? দিলীপের জবাব, ‘‘বললাম, নতুন লোকেরা দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা কম। কার্যকর্তাদের সঙ্গে বিশেষ কাজও করেননি। ফলে একটা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।’’
প্রসঙ্গত, বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রাজনীতিতে নতুন। বস্তুত, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের প্রার্থী হিসাবেই তাঁর প্রথম বিজেপিতে প্রবেশ। তার পরে তিনি সাংসদের দায়িত্ব এবং উত্তরবঙ্গের কিছু সাংগঠনিক কাজ সামলাতেন। অকস্মাৎ গত সেপ্টেম্বরে তাঁকে দলের রাজ্য সভাপতি করা হয়। পাশাপাশি, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর অভিজ্ঞতা নিয়েও দলের অন্দরে প্রশ্ন আছে। বিজেপিতে ওই পদে যিনি থাকেন, তাঁকে আরএসএস থেকে পাঠানো হয়। এই প্রেক্ষিতেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, ভাগবতের কাছে নতুন এবং অনভিজ্ঞ বলতে দিলীপ সুকান্ত ও অমিতাভের কথা বোঝাতে চেয়েছেন।
রাজ্য বিজেপির নতুন পদাধিকারীমণ্ডলীতে সিংহভাগ পুরনো নেতা বাদ পড়ায় দলের একাংশ ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি, রাজ্য পদাধিকারীমণ্ডলী এবং জেলা সভাপতিদের মধ্যে মতুয়া প্রতিনিধি না থাকায় ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এবং দলের কয়েক জন বিধায়ক। শান্তনু এবং সেই বিধায়কদের কয়েক জন ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন। শান্তনু অমিতাভর নাম না করে তাঁকে ওই পদ থেকে সরানোর দাবি তুলেছেন। শান্তনুর সঙ্গে রাজ্য বিজেপির বিক্ষুব্ধ শিবিরের নেতাদের অনেকেরই বেশ কয়েক বার বৈঠক হয়েছে। এই ঘটনাপ্রবাহের জেরে বিক্ষুব্ধ শিবিরের দুই নেতা তথা দলের প্রাক্তন রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার এবং রীতেশ তিওয়ারিকে ‘সাময়িক ভাবে বরখাস্ত’ করেছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব।
এই পরিস্থিতির আঁচ ছড়িয়েছে জেলা বিজেপিতেও। দলের দৈনন্দিন কাজকর্মে পুরনো পরিচিত নেতাদের অনেককেই ইদানীং দেখা যায় না। কলকাতা, বিধাননগর, চন্দননগর, শিলিগুড়ি এবং আসানসোল পুরসভার ভোটেও তাদের শোচনীয় হার হয়েছে। আসন্ন ১০৮টি পুরসভার ভোটে জেলায় জেলায় যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, ক্ষোভ আছে তাঁদের নিয়েও। বিজেপির একাংশের বক্তব্য, বিধানসভা ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের ফলে অনেক কর্মী নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন। অনেকে ঘরছাড়া। একের পর এক ভোটে পরাজয়ের ফলেও কর্মীরা হতাশ। তার উপরে রাজ্য থেকে জেলা, সংগঠন থেকে ভোট— সর্বত্রই অভিজ্ঞ লোকের বদলে রাজ্যের কোনও কোনও নেতার ‘কাছের লোক’কে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে তৃণমূলের সঙ্গে এঁটে ওঠা যাচ্ছে না।
বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, এই পরিস্থিতির কথা ভাগবতকে বিস্তারিত জানিয়েছেন দিলীপ। তবে দিলীপ বলেন, ‘‘অত খুঁটিনাটি কথা ওঁর সঙ্গে হয়নি। অনেক কর্মী ভয়ের মধ্যে আছেন, সেটা বলেছি। উনি বলেছেন, আপনারা পুরনোরা এগিয়ে আসুন। আমি বলেছি, চেষ্টা করছি।’’
ভাগবত ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি শিলিগুড়িতে এবং ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি বর্ধমানে আরএসএসের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ প্রদেশ থেকে শুরু করে সেখানকার বিভাগ স্তর পর্যন্ত এবং বর্ধমানে মধ্যবঙ্গ প্রদেশ থেকে শুরু করে সেখানকার বিভাগ স্তর পর্যন্ত নেতারা বৈঠকে ছিলেন। দক্ষিণবঙ্গের প্রদেশ থেকে বিভাগ পর্যন্ত নেতাদের সঙ্গে অবশ্য ভাগবত বৈঠক করেননি। তাঁদের সঙ্গে গত ৩ থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় কেশব ভবনে বৈঠক করেছেন আরএসএসে-র সর কার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবালে।
অন্য দিকে, সুকান্ত এ দিন পুরভোটের প্রচারে বহরমপুরে গিয়ে দলের বিক্ষুব্ধ অংশকে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির যাঁরা নির্দল প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। বিজেপিতে সংগঠনই এখানে শেষ কথা। সংগঠনের কথা মতো সকলকেই চলতে হবে। যাঁরা সংগঠনের কথা মতো চলতে পারবেন না, তাঁদের বিজেপি দলে রাখবে না।’’