একই দিনে দুই নেতার কর্মসূচিতে অশান্তির আশঙ্কা

শুভেন্দুর গড়ে আজ দিলীপ

বৃহস্পতিবার রাজ্যের পরিবহণ ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর ‘গড়’ নন্দীগ্রামে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে সাংসদ ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের আসার সংবাদে নন্দীগ্রাম তো বটেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৯ ০১:১৬
Share:

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।—ফাইল চিত্র।

শুভেন্দুর খাসতালুকে এ বার পা রাখতে চলেছেন দিলীপ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাজ্যের পরিবহণ ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর ‘গড়’ নন্দীগ্রামে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে সাংসদ ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের আসার সংবাদে নন্দীগ্রাম তো বটেই। জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। তবে গেরুয়া শিবিরকে ‘মাঠ’ ছাড়তে রাজি নয় শাসক দল। একই দিনে সেখানে ‘জনসংযোগ যাত্রা’ কর্মসূচি নিয়েছে ব্লক তৃণমূলও। যেখানে এলাকার বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর উপস্থিত থাকার কথা। সম্প্রতি জেলায় দুই তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় বিজেপির দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠায় পরিস্থিতি এমনিতেই উত্তপ্ত। তার উপর একই দিনে গেরুয়া এবং ঘাসফুল শিবিরের ‘হেভিওয়েট’ দুই নেতার পৃথক কর্মসূচি ঘিরে ইতিমধ্যেই নন্দীগ্রামে রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে। যার পিছনে রয়েছে দু’দলের কর্মসূচির অনুমতি নিয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ।

তৃণমূল সূত্রে খবর, নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের ভেটুরিয়া থেকে টেঙ্গুয়া পর্যন্ত ‘জনসংযোগ যাত্রা’ কর্মসূচি রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ একটি বড় মিছিল হবে। থাকবেন শুভেন্দু। তার জন্য কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকা জুড়ে চলছে মাইকিং। পোস্টার লাগানোর কাজও সারা। নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাথ পাল বলেন, ‘‘শুভেন্দুবাবুর কর্মসূচি বলে কথা। জনতার ঢল নামবে। তাই আগেভাগেই নন্দীগ্রাম থানাকে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম। তার ভিত্তিতে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি পেয়ে গিয়েছি।’’

Advertisement

অপরদিকে জেলা বিজেপি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকালেই জেলায় পৌঁছে যাবেন দলের রাজ্য সভাপতি। সকালে চণ্ডীপুরের হাঁসচড়া থেকে সঙ্কল্প যাত্রায় পা মেলাবেন দিলীপ। বিকেলে নন্দীগ্রামের আমদাবাদ থেকে বিরুলিয়া বাজার পর্যন্ত সঙ্কল্প যাত্রা হবে। প্রায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে মিছিলে থাকবেন দিলীপ। এর জন্য দলীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে জেলা নেতৃত্ব। আর এখানেই দেখা দিয়েছে সংশয়। পুলিশের দাবি, বিজেপির এই কর্মসূচির কথা তাদের জানা নেই। এমনকী বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দলের রাজ্য সভাপতির কর্মসূচির জন্য বিজেপির তরফে অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জেলা পুলিশ সূত্রে খবর।

এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকেলে দিলীপের কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, গত ৭ মে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী সিদ্ধার্থ নস্করের সমর্থনে নন্দীগ্রামে প্রচারে গিয়েছিলেন দিলীপ। নন্দীগ্রামের গোপালপুর থেকে তেখালি পর্যন্ত রোড শো করেন। তারপর খেজুরি যাওয়ার পথে তেঁতুলতলার কাছে বিজেপি ও শাসক দলের কর্মীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। বিজেপি রাজ্য সভাপতির গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টার পাশাপাশি তাঁকে এবং কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগও উঠেছিল।

তারপর থেকে নন্দীগ্রামে তেমন বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি নেয়নি বিজেপি নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহল-সহ গোটা রাজ্যে শাসক দলের ভরাডুবি হয়েছে। জঙ্গলমহল পুনরুদ্ধারে তৃণমূল নেত্রী নন্দীগ্রামের বিধায়ককে দায়িত্ব দেওয়া পরই দিলীপ ঘোষের ছেড়ে আসা বিধানসভা খড়গপুরে হামেশাই ছুটে বে়ড়াচ্ছেন শুভেন্দু। পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ জঙ্গলমহলে বিজেপির সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই শুরু করেছে শাসক দল। এ হেন পরিস্থিতিতে শুভেন্দুর গড়ে দিলীপের কর্মসূচি শুভেন্দুকে চাপে ফেলার জন্যই বলে মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও বিজেপির জেলা নেতৃত্ব তা মানতে নারাজ। দলের জেলা সভাপতি (তমলুক) নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘এটা আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি। তার জন্য আগে থেকেই পুলিশকে সমস্ত তথ্য জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তবে প্রশাসনের অনুমতি না থাকলেও নন্দীগ্রামের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন।’’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হলদিয়া) পারিজাত বিশ্বাস বলেন, ‘‘তৃণমূল মিছিলের জন্য অনুমতি চেয়েছিল। তবে বিজেপির পক্ষ থেকে সেরকম কোনও আবেদন এখনও আসেনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement